খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
Khabor Sojasuji Logo_200x120
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

পঞ্চায়েত ভোটে জামালপুরে তৃণমূলের জয়জয়কার, ধরাশায়ী বিরোধীরা

পঞ্চায়েত ভোটে তিনটি স্তরেই তৃণমূলের জয়জয়কার জামালপুরে। সবুজ ঝড়ে কার্যত উড়ে গেল বিরোধীরা।জামালপুর ব্লকের ১৩ টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৩ টিই তৃণমূলের দখলে। কয়েকটি পঞ্চায়েতে বিরোধীরা খাতা খুললেও সেভাবে দাগ কাটতে পারে নি।জামালপুর ব্লকের ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন সংখ্যা ২৫৫ টি।বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৩ টি আসনে আগেই জয়লাভ করেছিল তৃণমূল।ভোট হয়েছিল ২২২ টি আসনে। গণনার পর দেখা যায়, গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২৫৫ টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ২১২ টি আসন, সিপিএমের দখলে ৩৪ টি আসন, বিজেপির দখলে ৮ টি আসন এবং আরএসপি ১ টি আসনে জয়লাভ করেছে। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে খাতাই খুলতে পারে নি বিরোধীরা। জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির ৩৯ টি আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই ৩ টি আসনে জয়লাভ করেছিল তৃণমূল। ভোট হয়েছিল ৩৬ টি আসনে। গণনার পর দেখা যায় পঞ্চায়েত সমিতির সব আসনেই জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস।আর জেলা পরিষদের ৩ টি আসনেও বিপুল ভোটে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস।আর এ সবই সম্ভব হয়েছে জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মেহেমুদ খাঁনের সুযোগ্য নেতৃত্বে।ভোট ঘোষণার পর থেকে ব্লক এলাকা কার্যত চষে বেরিয়েছেন তিনি এবং তাঁর পুরো টিম। ব্লক এলাকায় বিভিন্ন মিটিং, মিছিল,পাড়া বৈঠক, পথসভা, জনসভা এবং বাড়ি বাড়ি প্রচার, সর্বত্রই দেখা গেছে জামালপুরের দুঁদে নেতা মেহেমুদ খাঁন, জামালপুরের বিধায়ক অলোক কুমার মাঝি এবং জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি ভূতনাথ মালিককে। সাংসদ সুনীল কুমার মন্ডল থেকে পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার,সকলেই এসেছিলেন জামালপুরে ভোট প্রচারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পকে সামনে রেখে করেছেন ভোটের প্রচার।আর তারই ফলস্বরূপ জামালপুরের এই অভাবনীয় ফলাফল।অন্যদিকে, ব্লক এলাকায় সিপিএম বড় কোনও জনসভা না করলেও বাড়ি বাড়ি প্রচারে কোনও খামতি রাখে নি। সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা সমর ঘোষ, জামালপুরের প্রাক্তন বাম বিধায়ক সমর হাজরা ছুটে বেরিয়েছেন ব্লকের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে মানুষ তাদের ডাকে সেভাবে সাড়া দেয়নি।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পই ভরসা রেখেছেন মানুষ।ব্লকের ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫৫ টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩৫ টি আসন নিজেদের ঝুলিতে আনতে পেরেছে বাম শিবির।আর ভোট ঘোষণার পর থেকে ব্লক এলাকায় প্রচার কর্মসূচিতে কংগ্রেস এবং বিজেপিকে সেভাবে দেখা যায় নি।ব্লকের দু’একটি পঞ্চায়েতে মাত্র ৮ টি আসনে জয়লাভ করেছে বিজেপি। কংগ্রেস তো খাতাই খুলতে পারে নি।আর এই ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে, জামালপুর ব্লকে বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে সিপিএম। তৃণমূলের এই অভাবনীয় জয়ের জন্য জামালপুরের আপামর জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মেহেমুদ খাঁন।তিনি বলেন,”এই জয় জামালপুরবাসীর জয়,মা মাটি মানুষের জয়।আগামী ৫ বছরের জন্য মানুষ আমাদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে দিয়েছে। নতমস্তকে আমরা সেই দায়িত্ব পালন করব।”এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বার্তাও দেন তিনি।কেউ ঝুট ঝামেলা করলে দল দায় নেবে না বলেও জানিয়েছেন ব্লক সভাপতি মেহেমুদ খাঁন। ব্লকের ১৩ টি পঞ্চায়েতই নিজেদের দখলে রেখেছে তৃণমূল।পাড়াতল ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩ টি আসনের মধ্যে ১১ টিতেই জয়লাভ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।পিরিজপুর এবং গোহালদহ – এই দুটি আসনে জয়লাভ করেছে সিপিএম। চকদীঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৭ টি আসনের মধ্যে ১৯ টি আসনে জয়ী তৃণমূল,৮ টি আসনে জয়ী সিপিএম। জৌগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৪ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়ী ১৯ টি আসনে, সিপিএম জয়ী ২ টি আসনে এবং ৩ টি আসনে জয়লাভ করেছে বিজেপি।জাড়গ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫ টি আসনের মধ্যে ২২ টিতেই জয়ী তৃণমূল,৩টি আসনে জয়ী সিপিএম। আবুজহাটি ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়লাভ করেছে ১২ টি আসনে, সিপিএমের দখলে ৩টি টি আসন এবং বিজেপির দখলে ১ টি আসন।জামালপুর ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭ টি আসনেই জয়ী তৃণমূল।পাড়াতল ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬ টি আসনের মধ্যে ১৩ টি আসনে জয়ী তৃণমূল,২টি আসনে জয়ী সিপিএম এবং ১ আসনে জয়ী বিজেপি।পাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়ী ১৮ টি আসনে, সিপিএম জয়ী ২ টি আসনে।জোৎশ্রীরাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ২২ টি আসনের মধ্যে ১৯ টি আসনে জয়ী তৃণমূল,১টি আসনে জয়ী সিপিএম এবং ২ আসনে জয়ী বিজেপি।জামালপুর ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়ী ১৩ টি আসনে, বিজেপি ১ টি এবং সিপিএম ১ টি আসনে জয়লাভ করেছে।আবুজহাটি ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়ী ১১ টি আসনে এবং সিপিএম জয়ী ৩ টি আসনে। আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৬ টি আসনের মধ্যে ১৮ টিতেই জয়ী তৃণমূল,৭ টি আসনে জয়ী সিপিএম এবং ১ টি আসনে জয়ী আরএসপি। বেরুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০ টি আসনেই জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস।পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব থেকে ভোট গ্রহণ,সারা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অশান্তির ঘটনা ঘটলেও জামালপুর তার ব্যতিক্রম।ভোট গ্রহণের দিন দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া জামালপুর ব্লকের সর্বত্র শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে ভোট গ্রহণ।ভোট গণনার দিনও একই ছবি ধরা পড়ল। দিনভর শান্তিপূর্ণ ভাবেই চললো ভোট গণনা।সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাউন্টিং এজেন্টরা উপস্থিত ছিলেন কাউন্টিং টেবিলে।১১ জুলাই সকাল ৮ টায় শুরু হয় ভোট গণনা, গণনা চলে ৯ জুলাই ভোর পর্যন্ত। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ মিলিয়ে ৮৬ টি টেবিলে মোট ন’রাউন্ড গণনা হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল খুব আঁটোসাঁটো। ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে পরিপয় পত্র ছাড়া ভিতরে প্রবেশ করার উপায় ছিল না।ভিতরে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান এবং সশস্ত্র রাজ্য পুলিশ‌।আর কাউন্টিং হলের বাইরে ২০০ মিটারের মধ্যে জারি ছিল ১৪৪ ধারা। রাস্তায় পুলিশের টহলদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকদেরকে পরিচয় পত্র ছাড়া কাউন্টিং হলের ত্রিসীমানায় আসতে দেয় নি পুলিশ।ফলে এলাকা ছিল শান্ত। কাউন্টিং শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা যে যার মতো বাড়ি ফিরে গেছে,কোথাও কোনও অশান্তি ঘটেনি।আর এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব অবশ্যই পুলিশ প্রশাসনের। জামালপুর থানার ওসি রাকেশ সিং এর নেতৃত্বে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে জামালপুরে ভোট গণনা হওয়ার জন্য শাসক থেকে বিরোধী, প্রশংসা করছেন সবাই।আর এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতেই হয় জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদারের কথা। উনিও যেভাবে পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে নিজ দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন তাও প্রশংসার দাবি রাখে।

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest

Recent Posts