খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

এ কেমন উল্লাস !

শেষ হল মাধ্যমিক পরীক্ষা।সীমা নেই পরীক্ষার্থীদের আনন্দ উচ্ছ্বাসের।সারা রাজ্যের মানুষ প্রত্যক্ষ করল মাধ্যমিকের আবশ্যিক বিষয় ভৌত বিজ্ঞান পরীক্ষা শেষের পর পরীক্ষার্থীদের আনন্দ প্রকাশের এক নতুন রুপ।বই, খাতার পাতা ছিঁড়ে রাস্তায় ওড়াতে ওড়াতে বাড়ি ফেরা।কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, পাহাড় থেকে সমতল সর্বত্র একই ছবি।মাধ্যমিকের আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষার শেষ দিন অর্থাৎ ভৌত বিজ্ঞান পরীক্ষার শেষে বইয়ের পাতা ছেঁড়ার পাশাপাশি কোথাও কোথাও আবার চলল আবির খেলা, স্কুলের জামা ছেঁড়া ছেড়ি ! প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক,এ কেমন আনন্দ উল্লাস ? আমরা কোন্ দিকে এগিয়ে চলেছি ? বইয়ের পাতা ছিঁড়ে রাস্তায় উড়িয়ে সমাজের কাছে কি বার্তা দিতে চাইছে এই সব অল্প বয়সী স্কুল পড়ুয়ারা ? এটা তো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।সারা রাজ্যে একই দিনে একই সময়ে এই ঘটনা ঘটল।এরা তো কেউ আর পরীক্ষার আগের দিন আলোচনা করে এরকম করার সিদ্ধান্ত নেয়নি।এটা সামাজিক অবক্ষয়ের ফল।আর সামাজিক এই পচন একদিনে শুরু হয় নি। ক্যান্সারের মতো ধীরে ধীরে সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।বইয়ের প্রতি টান না থাকলে এরকমই হয়।অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী এখন মোবাইলে আসক্ত,বইয়ে অনাসক্ত।বইয়ের প্রতি অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রীর সেই আবেগ আর নেই,নেই বইয়ের সঙ্গে ভালোবাসার যোগ।পড়াশোনার গুরুত্বই নেই অনেকের কাছে।পাশফেল না থাকলে যা হয় আর কি ! আর এজন্যই তো বই খাতা ছিঁড়ে এতো আনন্দ,উল্লাস। পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা ভাবনার কোনো সময় নেই তাদের কাছে।হচ্ছে হবে এরকম মনোভাব।মাধ্যমিকে বসলেই তো এখন পাশ করা যায়।তাহলে বই রেখে লাভ কি ? এই হল ছাত্র ছাত্রীদের অনেকের বক্তব্য।কোনো ভাবে মাধ্যমিক পাশ করে এগারো ক্লাসে নামটা লেখাতে পারলেই হল।তাহলেই তো মিলবে মোবাইল কেনার টাকা।ব্যস,তাহলে আর পায় কে।অ্যাকাউন্টে মোবাইল কেনার টাকা ঢোকার পর আর স্কুল মুখো হচ্ছে না কেউ।সপ্তাহে একদিন তো দূরের কথা,মাসেও একদিন হাজির হচ্ছে না অধিকাংশ এগারো বারোর ছাত্র ছাত্রী।ক্লাসে দু’একজনের দেখা মেলে মাঝে মধ্যে।শিক্ষার প্রতি ছেলে মেয়েদের কিরুপ মনোভাব এটা তারই প্রতিফলন।আর এরজন্য আমরাও কমবেশি দায়ী।শুধু ছেলে মেয়েদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।আমরা ওদের ছোট থেকে ভালবাসা ও শৃঙ্খলা শেখাতে পারিনি।তাই আনন্দ উল্লাসের নামে এই উচ্ছৃঙ্খল আচরণ।আনন্দ উচ্ছ্বাসের নামে বই খাতা ছিঁড়ে ফেলা কখনোই সুস্থ চিন্তা ধারার লক্ষণ নয়।এটা শুরুতেই আটকানো দরকার।তা না হলে সুস্থ সমাজকে অসুস্থ করে তুলবে এই উচ্ছৃঙ্খলতা।পড়াশোনার পাশাপাশি সঠিক আচরণও শেখা দরকার ছাত্র ছাত্রীদের।আজ যদি আমরা তাদেরকে ‘মানুষ’ হওয়ার শিক্ষা দিতে পারতাম তাহলে এদিন আর আমাদের দেখতে হতো না।ছোট থেকে ছেলেমেয়েদের হাতে মোবাইল তুলে না দিয়ে যদি একটু নীতি শিক্ষা দিতাম তাহলে মনে হয় ভালো হতো। অধিকাংশ স্কুল পড়ুয়ার মধ্যে নীতি শিক্ষার বড় অভাব। বড়দের সম্মান তো দূরের কথা,স্কুল থেকে বের হলে অনেকে আবার স্যারেদের সামনেই সিগারেট টানে। সামান্য চক্ষু লজ্জা বলতে কিছু নেই।কোন্ পথে যাচ্ছি আমরা ? এরাই তো দেশের ভবিষ্যৎ। এখনই যদি এদের এই অবস্থা হয় তাহলে বড় হলে এরা কি করবে ? ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মনে শিক্ষা সম্পর্কে যে বিরুপ চিন্তা ভাবনা তা অবিলম্বে কাটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।বই আমাদের পরম বন্ধু – এটা তাদের বোঝাতে হবে।সামাজিক এই পচন রুখতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।নিজেদের বাড়ি থেকেই শুরু করতে হবে নীতি শিক্ষার পাঠ।তা না হলে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।এখনই যদি আমরা ছোট থেকে ছেলেমেয়েদের নীতি শিক্ষা না দিই তাহলে সমাজের এই পচন রোখা যাবে না।তখন হাত কামড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest