বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় :প্রতিবছরের মতো এবারও মহাসমারোহে শিয়াখালা উত্তর বাহিনী মাতার বাৎসরিক প্রতিষ্ঠা উৎসব পালিত হলো। উৎসব উপলক্ষে দেবীর বিশেষ পূজা চন্ডীপাঠ ও নরনারায়ণ সেবার ব্যবস্থা করা হয়, সাথে সাথে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের মত এবারও এক বিরাট মেলা বসে। এই দেবী শিয়াখালা গ্রাম ছাড়া আর কোথাও নেই, এটি ৫১ পীঠের মধ্যে উল্লেখিত না হলেও এটি একটি পীঠস্থান হিসাবে কথিত রয়েছে। প্রায় পাঁচশত বছরের অধিক এই দেবীর উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত আছে। শোনা যায় এই শিয়াখালা গ্রামে শান্ডিল্য গোত্রীয় এক ব্রাহ্মণ বাস করতেন, তার এক বিদ্যা বিমুখ পুত্র সন্তান ছিল কিছুতেই তার পিতা তাকে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করাতে না পেরে একদিন ওই ব্রাহ্মণ তার গৃহিণীকে আদেশ দিলেন ছেলেকে ভাত দেওয়ার থালায় ভাত পরিবেশন না করে যেন এক থালা ছাই দেওয়া হয়। স্বামীর কথা শুনে তিনি ছেলেকে অন্নের পরিবর্তে এক থালা ছাই পরিবেশন করেন, এই দৃশ্য দেখে ওই ব্রাহ্মণ সন্তান মনের দুঃখে জীবন বিসর্জন দিতে পাশেই প্রবাহিত কৌশিকী নদীতে ঝাপ দেন। জলে ডুব দেয়ার পরেই তিনি একটি বস্তুর আঘাত পান, বস্তুটিকে জল থেকে তুলে তিনি দেখেন একটি দেবী মূর্তি,সঙ্গে সঙ্গে এক দৈববানী শুনতে পান তিনি, কে যেন বলছে আমি দেবী বিশালাক্ষী উত্তর বাহিনী আমাকে তুই এখানে প্রতিষ্ঠিত কর এবং আমার নিয়মিত পূজা অর্চনা কর। এই দৈববাণী শুনে ব্রাহ্মণ সন্তান পাশেই এক চালা ঘরে ওই দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা অর্চনা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ওই ব্রাহ্মণ সন্তান এক সর্বজ্ঞ জ্ঞানী পন্ডিতে পরিণত হন। এই দেবীর উৎপত্তি সম্পর্কে আরও একটি প্রচলিত কাহিনী আছে। পরে বর্ধমানের মহারাজার বদান্যতায় এখানে মন্দির নির্মাণ করা হয়। যদিও আদি প্রস্তর মূর্তিটি চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে প্রথমে আদি মূর্তির অনুকরণে মৃন্ময় মূর্তি নির্মাণ করা হয় পরে বাংলার ১৩৪০ সালের ১৬ই আষাঢ় কাশি ধাম থেকে তৈরি করে আনা বিশালাকার প্রস্তর মূর্তি এই মন্দিরে স্থাপন করা হয়, সেই থেকেই প্রতিবছর এই দিনটিতে মায়ের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। এছাড়াও প্রতিবছর দুর্গা একাদশীতে যাৎ উৎসব পালিত হয়।
উত্তর বাহিনী সেবা সমিতির সম্পাদক অরুময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন এই সেবা সমিতির পক্ষ থেকে মন্দিরটি সংস্কার করে নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি জানান দেবীর প্রতিদিন পূজা এবং ভোগ বিতরণের ব্যবস্থা রয়েছে। আজ এই প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রায় দশ হাজার মানুষের মধ্যে ভোগ বিতরণ করা হয়। তিনি জানান সেবা সমিতির পক্ষ থেকে মন্দিরকে সাজানোর কাজ চলছে, এই দেবীর উৎপত্তি সম্পর্কে কাহিনীগুলি শীঘ্রই মন্দিরের পিছনে চিত্রায়িত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান এটি একটি ঐতিহাসিক ও জাগ্রত স্থান, তিনি এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারি সহযোগিতার আবেদন জানান।