খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
Khabor Sojasuji Logo_200x120
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

অধীরের দুর্গ কি এবারও দুর্ভেদ্য থাকবে !


লোকসভা নির্বাচনে পরপর ছ’বার জিতে জয়ের ডবল হ্যাটট্রিক করার লক্ষ্য নিয়ে বুধবার বহরমপুরে জেলা প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে মনোয়নপত্র জমা দিলেন বিদায়ী লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা তথা বহরমপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় অসংখ্য কংগ্রেস-বাম সমর্থক তাঁর সঙ্গে মিছিল করে জেলা প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত যান।
১৯৯৯ অধীর চৌধুরী প্রথমবার কংগ্রেসের প্রতীকে বহরমপুর কেন্দ্র থেকে আরএসপি প্রার্থী প্রমথেশ মুখার্জিকে হারিয়ে জয়ী হন। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত অধীর চৌধুরীর জয়ের অশ্বমেধের ঘোড়া বহরমপুর কেন্দ্রে থামানো যায়নি।তবে এই প্রথমবার বামেদের সঙ্গে জোট করে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়তে নেমেছেন অধীর চৌধুরী। বহরমপুর কেন্দ্র থেকে ইতিমধ্যে মনোনয়ন পত্র জমা করেছেন বিজেপি প্রার্থী ডাঃ নির্মল সাহা এবং তৃণমূলের ইউসুফ পাঠান।
তবে অনেকেই মনে করছেন এবারের লড়াই অধীর চৌধুরীর কাছে অন্য নির্বাচনগুলির তুলনায় অনেক কঠিন হতে চলেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তৰ্গত ৭ টি বিধানসভা এলাকাতেই পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস।অন্যদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলাতে এই প্রথমবার তৃণমূল কংগ্রেস কোনও সংখ্যালঘু মুখকে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে। তাই অধীর নিজেও জানেন তাঁর এবারের লড়াই গত পাঁচবারের থেকে আলাদা। বিরোধী দলের রাজনীতিকরা ইতিমধ্যেই বলা শুরু করেছেন লড়াই কঠিন বুঝে নির্বাচনী ময়দানে মেজাজ হারাচ্ছেন অধীর চৌধুরী। ইতিমধ্যে কমপক্ষে দু”বার অধীরের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের ধাক্কাধাক্কি করার অভিযোগ উঠেছে। সেই মামলাতে ইতিমধ্যে বহরমপুর থানার পুলিশ তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।গত সোমবার মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম যখন প্রশাসনিক ভবনে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যান সেই সময় বাম-কংগ্রেস জোটের প্রতি নিজের আস্থা দেখানোর জন্য অধীর সিপিএমের উত্তরীয় পরে সেলিমের পাশে বহরমপুরের রাজপথ ধরে হেঁটেছিলেন। তবে বুধবার যখন অধীর চৌধুরী মনোনয়ন পত্র জমা করতে যান সেই সময় সেলিমকে তাঁর পাশে দেখা যায়নি। যদিও সিপিএম-এর পতাকা হাতে নিয়ে অসংখ্য বাম কর্মী-সমর্থক কংগ্রেস কর্মীদের সাথে মিছিলে হাঁটেন। তবে অধীরের মনোনয়ন পর্বে হাজির ছিলেন ডিওয়াইএফআই এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জী।সাদা জামা, কালো প্যান্ট এবং মাথায় “হ্যাট” পরে অধীর চৌধুরীকে দেখার জন্য রাস্তার দুপাশে এদিন অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্রের হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দেন অধীর চৌধুরী। অধীর বলেন, “এই শহরের প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই আমি নিশ্চিত আবারও এই কেন্দ্র থেকে আমি জিতব। ” সেলিমের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন ,”আমিই মহম্মদ সেলিমকে আসতে বারণ করেছি। নিজের প্রচারে থাকতে বলেছিলাম। বাম নেত্রী মীনাক্ষী আমার সঙ্গে ছিল। এই সব নিয়ে আলোচনার কোনও অর্থ হয় না। বাম এবং কংগ্রেস জোট করেই লড়ছে। “এক সময় বহরমপুরকে কংগ্রেসের দুর্গ বলা হত। পর পর পাঁচ বার এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন লোকসভার কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। আর বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে শক্ত ঘাঁটি ছিল বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্র। গত লোকসভাতেও কঠিন লড়াইয়ের পড়ে বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্র অধীরকে জয় এনে দিয়েছিল। সে বার বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৮৯ হাজার ৬১টি ভোট লিড পেয়েছিলেন অধীর। কিন্তু একুশের নির্বাচনের পর থেকে বহরমপুরে সমান্তরাল ভাবে উঠে আসে বিজেপি এবং তৃণমূল।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হন বিজেপির সুব্রত মৈত্র। সে বার দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। আর অধীর চৌধুরীর দল কংগ্রেসের প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তী ছিলেন তৃতীয় স্থানে। বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা ত্রিস্তর পঞ্চায়েত বা পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস কী তার বহরমপুরের পুরনো গড় উদ্ধার করতে পারবে, সেই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে বহরমপুরের আনাচ কানাচে।
তবে বহরমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা এবং লোকসভা ভোট যেমন আলাদা, তেমনই তার ফলাফলও আলাদা হয়। পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটকে তৃণমূল প্রহসনে পরিণত করেছিল। আর বিধানসভা নির্বাচনে মোদী আর দিদি বিভাজনের রাজনীতি করেছিল। যার জেরে গত বিধানসভায় ফল অন্য রকম হয়েছিল।’’ এবারেও তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ উঠেছে। ফলে আপনারা জয়ী হবেন কী করে ? মনোজ বলেন, ‘‘এ বারে মোদী আর দিদিকে বহরমপুরের লোক যোগ্য জবাব দেবেন। এ বারে অধীর চৌধুরী ‘ডবল হ্যাটট্রিক’ করে লোকসভায় জয়ী হবেন।’’
বিজেপির বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের অত্যাচারে আমরা রাজ্য জুড়ে প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। আর তার পরের বছরে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ১৮ টি আসনে জয়ী হয়েছিলাম। ফলে পঞ্চায়েত ভোটে ফল ভাল হয়নি মানে লোকসভা পারব না এটা নয়।’’ বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের একুশের ভোটের তৃণমূলের প্রার্থী তথা বহরমপুরের পুরপ্রধান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা পুরসভা এবং ত্রিস্তর পঞ্চায়েত থেকে বাসিন্দাদের পরিষেবা দিয়ে চলেছি। সেই সঙ্গে আমাদের মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়ের কর্মযজ্ঞ চলছে। এ বারে বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে আমরাই লিড দেব।’’
বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে। এই পরিস্থিতিতে বহরমপুর কোন দলকে লিড দেয় তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে জুনের ৪ তারিখ পর্যন্ত।৪ জুনই বোঝা যাবে অধীরের দুর্গ দুর্ভেদ্য কিনা ?

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest

Recent Posts