খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

নয়ণমণির পরিণতি

অভিজিৎ রানা

রঙচটা সানের দুয়ারের একপাশে ছাঁচা থেকে যে বাঁশের খুঁটি মেঝেকে স্পর্শ করেছে, তাতে হেলান দিয়ে নয়ন তার জীর্ণ লালছাপা গামছা দিয়ে নীরবে নয়ণাশ্রু মুচ্ছিল।এদিকে মণিকা বাসন মাজতে মাজতে রাগে গরজাচ্ছিল,–হারামজাদি মাগী! বিশবছর ধরে বাপের অন্ন ধ্বংস করে, আমাদের মুখে চুনকালি লাগিয়ে, রাতের অন্ধকারে লোফার কুলাঙ্গারটার সাথে পালাতে তোর এতটুকু বুকে বিঁধল না হতচ্ছাড়ি ! দশবছর কুলোটা বদনাম শুনে, দশমাস- দশদিন পেটে ধরে বিয়ানু যে, সে কথাটা একবারো মনে হল না পোড়ামুখি! এখন আমরা গেরামের লোকের কাছে মুখ দেখাবো ক্যামনে? এর চেয়ে ঢের ভালো হোত ফটিক ডাক্তারের কাছে তেলপাট না করে, সারাজীবন বাঁজা থাকলে।-আঃ, তুমি এবার চুপ কর, মেয়েটাকে ওভাবে গালশাঁপ দিয়ো না,- কথা কটি বলে এক দু পা করে উঠানের দিকে এগিয়ে গেল নয়ণ….”মরণ! খুব তো শখ করে নাম রেখেছিলে নয়ণমণি,দিলো তো মুখে ঝামা ঘোষে…!.বুড় মিনসে খুব তো বলতে ওই আমার মেয়ে ওই আমার ছেলে;কলেজে পড়ে চাকরি করে আমাদের দেখবে,মুখ উজ্জ্বল করবে।আমি পইপই করে বলেছিলুম, ওই পড়াশুনো আর ওই সর্বনাশী ফোন ওর কাল করবে, সময় থাকতে ওর বে দিয়ে দাও” –কথাগুলি একনাগাড়ে বলে কলকল করে জল ছেড়ে দিল মণিকা , বাসনগুলি হাতের কায়দায় ধুতে লাগলো…সেইসঙ্গে যাকে উদ্দেশ্য করে এইবাক্যবাণ তাকে ভোলামাস্টারমশায়ের সাথে এগিয়ে আসতে দেখে আঁচল টেনে নিয়ে অবগুন্ঠানাবৃত হল । এতক্ষণে ঘটিবাটির ঠংঠং আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেল নয়ন….মাস্টারশাইকে মাদুরটা পেতে দিয়ে তারি এক কোণে ধপ্ করে বসে পড়ল সে–তার কাঁধে হাত রেখে ভোলাবাবু বললেন, মনকে শক্ত করো নয়ণ..।নয়ন গভীর দুটি জিজ্ঞাসু চোখে, কাঁপা কন্ঠস্বরে হা হুতাশ করে উঠলো ,’কেন এমন হয় মাস্টারবাবু!আপনি তো বলেছিলেন নয়নমণি একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবে, ওর সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও বাপ-মা, গাঁয়ের মুখ উজ্জল করবে। পোড়ামুখী কেন আমাদের মুখ পোড়ালো.!মাস্টারমশাই বললেন আমাদের সমাজের এ এক গভীর অসুখ,আমি ভেবেছিলাম এধরনের অসুখ নয়ণমণিকে আক্রান্ত করতে পারবে না।কিন্তু…..না!….নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ালেন, তারপর মন্থরপদে গলি পথ দিয়ে এগিয়ে চললেন।যেতে যেতে ভোলামাস্টার চিন্তার গভীর গহনে নিমোজ্জিত হলেন।..একটা কথাই তাঁর মনে বারংবার অনুরণিতহতে লাগলো …কেন এমন হয়,মাস্টারবাবু।’তার বুকের ভিতর একরাশ আশঙ্কা দলা পাকিয়ে উঠলো যখন ছেলেটার কথা মনে পড়লো,অত্যন্ত অসামাজিক,বাকচতুর এবং অসংযমী সে;ইদানীং অন্ধগলির পথে পা বাড়িয়েছে সে…সে যে কী করতে পারে, না পারে নয়ন বুঝুক না বুঝুক তিনি ভালো করে অনুভব করতে পারছেন। অঙ্কে পারদর্শী ভোলাবাবু কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছেন না কীভাবে নয়ণমণি এতবড় ভুল পথে প্ররোচিত হল…….!এ ত্রুটি কী নয়ণমণির বয়সের দোষ?তার সরলমতী বাবা-মার দোষ?না বর্তমান আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক পরিবেশের গুরুতর ব্যাধি!গলির মুক্ত পথ পেরিয়ে মেঠো পথ ধরে এগিয়ে যেতে যেতে উন্মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে প্রবল ঝাঁকুনী দিয়ে বিড়বিড় করে উঠলেন,”সে যাইহোক তার মতো বুদ্ধিজীবী লোকের সংকীর্ণ গন্ডীর বাইরে বেরিয়ে এর প্রতিকারে এগিয়ে যেতেই হবে, নইলে কীসের মনুষ্যত্ব…”

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest

Recent Posts

author-avatar
  • January 15, 2025

গুড়াপের চোপায় নাবালিকা ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মাত্র ৫৩ দিনের মাথায় অভিযুক্ত অশোক সিং-কে দোষী সাব্যস্ত করল চুঁচুড়া আদালত।১৭ জানুয়ারি শুক্রবার হবে সাজা ঘোষণা।

author-avatar
  • December 15, 2024

পান্ডুয়ার ইটাচুনা মান্দারণ সমবায় সমিতির নির্বাচনে সব ক’টি আসনেই জয়ী সিপিএম।শুন্য হাতে ফিরতে হল তৃণমূলকে।

author-avatar
  • December 15, 2024

খবর সোজাসুজি পত্রিকার শারদীয় উৎসব সংখ্যা ডাক যোগে পেতে আমাদের পত্রিকার অফিসিয়াল হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করুন। হোয়াটস অ্যাপ 094345 66498

author-avatar
  • November 22, 2024

ছবি আঁকায় রাজ্যে দ্বিতীয় বাঁকুড়ার অণ্বেষা

author-avatar
  • November 22, 2024

ছেলের দুটো কিডনিই নষ্ট,ছেলেকে বাঁচাতে রাজ্য সরকারের কাছে হাতজোড় করে কাতর আর্জি অসহায় বাবার