খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
Khabor Sojasuji Logo_200x120
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

চিত্রা শালিকের কথা

বিশ্ব রঞ্জন গোস্বামী

আমাদের দেশে যে কয়েকটি শালিক গোত্রীয় পাখি দেখা যায় চিত্রা বা তেলে শালিক তার মধ্যে সবচেয়ে বিরলতম।এদেরকে ইংরেজীতে Common starling বলা হয়।এরা দন্ডচারী বর্গের অন্তর্গত সারিক বংশের একটি প্রজাতি। জলের কাছাকাছি স্যাতঁস্যতে ঘাসের বা উন্মুক্ত কৃষি জমিতে,খালবিলের আশেপাশে ঝোপঝাড়গুলিতে এদের অস্থায়ীভাবে বসবাস করতে দেখা যায়। সবসময় দলবেঁধে চলাফেরা করতে দেখা যায়। সাধারনত ছোট বা বড় দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। দলের একজন স্থান ত্যাগ করলে অন্যরাও তা অনুসরণ করে অন্যত্র চলে যায়।আচার আচরণে অনেকটা আমাদের পরিচিত সাধারন শালিকের মত।এদের দুর থেকে দেখলে কুচকুচে কালো রংয়ের মনে হয়,কিন্তু কাছে গেলে এদের পালকের রং পরিস্কার বোঝা যায়। পাখিটির গায়ে রোদ পড়লে ধাতব সবুজ ও তার উপর প্রতিটি পালকের আগায় সাদাটে ছিট পরিস্কার দেখা যায়। মাথা ও গলায় একটু বেগুনী আভা রয়েছে। খুব ঠান্ডার সময় চঞ্চু কালো ও পরে হলুদ বর্ণ ধারণ করে, পা কালচে হলুদ এবং চোখ কালো রংয়ের। পাখিটি প্রায় ৯ ইঞ্চি বা ২০ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হয়।এদের বাসস্থান মূলত উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায়,তবে গ্রীস্মকালে পরিযায়ী হয়ে ইউরোপে এবং শীতে এশিয়া ও আফ্রিকায় চলে আসে। বলতে গেলে বিশ্বব্যাপী এদের বিচরণ ।ভারতে শীতকালে হিমালয় সংলগ্ন পাদদেশে পরিযায়ী হয়ে আসে।সাধারনত অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে দেখা যায়। আমাদের রাজ্যে উত্তরবাংলাতে বেশি দেখা যায়।এরা সাধারনত পোকামাকড় খায়,তবে এরা সর্বভুকও বটে, কেননা পোকামাকড়ের সাথে ফলমূলও খায়। প্রধানত কৃষকরা যেখানে জমি কর্ষণ করে বীজ বোনে সেখানে এদের বেশি দেখা যায়। এই আচরণ শুধু জমির কীটপতঙ্গ খাওয়ার জন্যই নয় কারণ তারা জমিতে বপন করা বীজ তুলেও খায়। পোকামাকড়ের লোভে কাদা খুঁচিয়ে নোংরা ঘাঁটাঘাঁটি করাও এদের অভ্যাস। এরা কিন্তু নিয়মিত স্নান করে ও পালক খুঁচিয়ে নিজেদের পালক পরিস্কার ও উজ্জ্বল রাখে।এদের রাত্রিকালীন আশ্রয়ে সমবেত হওয়ার আগে এরা ঝাঁকে ঝাঁকে গোলাকার বৃত্ত তৈরি করে যা কিনা প্রায়শই প্রসারিত ও সংকুচিত হয়,তাছাড়া আকৃতি এবং গতিপথও পরিবর্তন করে। বসন্তে ডেনমার্কের দক্ষিন — পশ্চিম জুটল্যান্ডে সূর্যাস্তের ঠিক আগে রাত্রিকালীল আশ্রয়ে লক্ষাধিক পাখিকে জমায়েত হতে দেখা যায়! এদের প্রজননের আচরণটি খুব মজার। পুরুষরা সাধারণত একগামী হয়,তবে বহুগামীও হতে দেখা যায়। প্রথমত পুরুষরা সঙ্গী নির্বাচনের জন্য কোন একটি গহ্বরের খোঁজ করে। সঙ্গীনীকে আকৃষ্ট করার জন্য বাসা তৈরির কাজ শুরু করে ও টাটকা সতেজ ফুল,লতা পাতা দিয়ে খুব সুন্দর করে বাসা সাজায়। পুরুষ পাখির বাসার সৌন্দর্য দেখে স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির গলায় বরমাল্য পড়িয়ে দেয়। আলংকারিক ভেষজ উপাদানগুলি সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। অনেক গবেষক মনে করেন ইয়ারোর মত গাছের গন্ধ হয়ত স্ত্রী পাখিকে আকর্ষণ করে। বাসা তৈরির সময় পুরুষ পাখি সঙ্গীকে আকৃষ্ট করার জন্য একনাগারে সুরেলা কন্ঠে গান গেয়ে য়ায় বিশেষত যখন স্ত্রী পাখি তার নির্মীয়মান বাসার কাছে আসে। জোড় বাধাঁর পর পুরুষ ও স্ত্রী পাখি উভয়েই বাসা বাধাঁর কাজ শেষ করে। যে কোন ধরনের গর্তে যেমন গাছে দালানে বা যেকোন ফাটলে এরা বাসা তৈরি করে। সাধারণত বাসা গর্তের ভিতরে খড়, শুকনো ঘাস ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয় যার ভিতরে নাইলিন হিসাবে থাকে পালক, পশম বা নরম কচি পাতা। বাসা তৈরি করতে চার-পাঁচ দিন সময় লাগে। ডিমে তা দেয়া,বাচ্চা প্রতিপালনে বাবা-মা উভয়েরই ভূমিকা থাকে। স্ত্রী পাখি কয়েকদিন ধরে চার থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে।ডিমে ১৩ দিন ধরে তা দেয়।এদের বছরে দুই থেকে তিন বার ডিম পারতে দেখা যায়। প্রায়শই এরা চিল বা বাজ জাতীয় পাখিদের শিকারে পরিনত হয়। তবে আশার কথা, বিশ্বব্যাপী এরা ভালো অবস্থাতেই আছে।কোন অস্তিত্বের সংকটে নেই।

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest

Recent Posts