খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
Khabor Sojasuji Logo_200x120
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

সংবিধানের চোখে রাজ্যপাল

তন্ময় কবিরাজ

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”আপনার পাশে বসাও পাপ”,তখন দুটো কথা মনে পড়ে যায়।এক, কলকাতা হাইকোর্ট একটি মামলায় বলেছিল,অভিযোগের এক শতাংশও সত্যি বলে প্রমাণিত হলে সেটাও লজ্জার ।দুই, ভারতীয় সংবিধানের ১৬৩নম্বর ধারায় রাজ্যপাল – মুখ্যমন্ত্রীর যে সম্পর্কের কথা বলা রয়েছে সেটাও প্রশ্নের মুখে পড়ছে।রাজ্যপাল পদটি নিয়ে স্বয়ং আম্বেদকর সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।রাজ্যপাল সাংবিধানিক প্রধান। আদালত বিভিন্ন মামলায় রাজ্যপালকে তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করেছেন যাতে নির্বাচিত সরকার আর মনোনীত প্রার্থীর বিবাদ সৃষ্টি না হয়।সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে মানুষই গুরুত্ব পেয়েছে।তাই রাজ্যপালের একচেটিয়া ক্ষমতাতেও আদালত এবং মন্ত্রিসভার হস্তক্ষেপ করার অধিকার রয়েছে।সুনীল কুমার বনাম পশ্চিমবঙ্গ সরকার মামলায় আদালত জানায়,১৯৩৫সালের আইন মোতাবেক আজকের রাজ্যপালকে বিবেচনা করলে ভুল হবে।তিনি সংবিধানের প্রধান হিসাবে থাকবেন বলে শামসের সিংহ বনাম পাঞ্জাব রাজ্যে মামলাতেও আদালত জানায়।রাজ্যপাল কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করতে পারেন না। অথচ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বর্তমান সময়ে বারবার রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠছে।রাজ্যপালকে স্বাধীন ও অরাজনৈতিক করার কথা উঠেছে হরগোভিড বনাম রঘুকূল মামলায়। তাছাড়া সংবিধানের ১৫৮ নম্বর ধারা অনুসারে একজন রাজ্যপাল পার্লামেন্ট বা রাজ্যস্তরে কোনো কক্ষেরই সদস্য থাকতে পারবেন না।যার অর্থ কেন্দ্র বা রাজ্যেস্তরে কোনো কক্ষের সদস্যপদ গ্রহণে তাঁকে রাজনৈতিক পদ্ধতির মধ্যে দিয়েই যেতে হয়,ব্যতিক্রমী সদস্য পদ ছাড়া।তাই সংবিধান রাজ্যপালের সংসদে সদস্যপদ গ্রহণে বিরত থেকেছে। তাঁর দায়বদ্ধতা সংবিধানের কাছে।সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যশাসন পরিচালিত না হলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে অবগত করতে পারেন।সংবিধানে বলা হয়েছে,যদি কেউ কেন্দ্র বা রাজ্যে ্স্তরের কোনো কক্ষে সদস্য পদ গ্রহণ করে থাকেন তবে তাঁকে রাজ্যপাল হিসাবে শপথ গ্রহণের আগে সে সদস্য পদ ত্যাগ করতে হবে।যার অর্থ,শুধু পদত্যাগ নয়,রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব বর্জন করে সংবিধানের আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে।রাজ্যপালের পদত্যাগ নিয়ে বারবার সমালোচনা হয়েছে। সরকোরিয়া কমিশন তার রিপোর্টে বলেছে, বিশেষ বা জরুরিকালীন অবস্থার সৃষ্টি না হলে রাজ্যপালকে অপসারণ করা যাবে না। ভেঙ্কটচালিয়া কমিশন জানিয়েছে,রাজ্যপালকে অপসারিত করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।অন্যদিকে, পুঁছি কমিশন রাজ্যপাল অপসারণের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে।তবে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সামনে শপথ নেওয়া রাজ্যপালকে দেশের সংবিধান মেনে কাজ করবে।রাজ্যপাল চাইলেও তিনি তাঁর গন্ডির বাইরে যেতে পারেন না। গুজরাট বনাম আর. এ. মেহেতা মামলাতেও আদালত সংবিধানে বর্ণিত রাজ্যপালের ক্ষমতার কথাই মনে করিয়েছে। জরুরিকালীন অবস্থায় তিনি অর্ডিন্যান্স পাশ করতে পারলেও তারও অনুমোদন দরকার। তাছাড়া অর্ডিন্যান্স পাশ করাটা পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।এমনকি ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাও বিচারবিভাগীয় পুনর্মূল্যায়নের আওতায় রয়েছে।এপুরু সুধাকর মামলায় দেশের আদালত রাজ্যপালের ১৬১নম্বর ধারায় বর্ণিত ক্ষমতার উপর হস্তক্ষেপ করে।বলা বাহুল্য, বর্তমান সমাজ পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল বিতর্ক সংবিধানের পক্ষে সুখকর নয়।রাজনীতি আজ খুব সস্তা,মুখোরোচক বিনোদন। মেঘালয় হাইকোর্টের বিচারপতি তাই বলছেন,বিচারপতিদের রাজনীতিতে আসা উচিত নয়।আবার রাজনৈতিক দলগুলোরও উচিত সংবিধানের গুরুত্বপূর্ন পদে থাকা মানুষদের রাজনীতিতে না জড়ানো,কারণ এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হচ্ছে। আসলে আজকের রাজনীতিতে নীতি আদর্শ বলে কিছুই নেই। মূল্যবোধ খোঁজাটা তাই নেহাতই বোকামো।একটা সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত,নাহলে সংবিধান বাঁচবে না,মানুষের বিশ্বাস থাকবে না।যখন কোনো নেতা বা নেত্রী প্রকাশ্যে বলে,বিচার করবে জনতা ,তখন আইন আদালতের আর কি দরকার? বিচারব্যবস্থার উপর যখন রাজনীতির অভিযোগ উঠে,তখন মানুষের ভরসা নষ্ট হয়ে যায়। বিশ্বাস হারাচ্ছে সবকিছু, অন্যদিকে, বিশ্বাস ধরে রাখার যোগ্যতাও কমছে।রাজ্যপাল অন্যায় করলে সাংবিধানিকভাবে তা প্রতিহত করা যায় কিন্তু সেটা না করে ভোটের কথা ভেবে রাজনীতি করতে গিয়ে সংবিধানের আদর্শকে নষ্ট করছে রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা। তাঁদেরও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা দরকার। তাঁরাও নাগরিক। মৌলিক কর্তব্য পালনের প্রাথমিক কথাগুলো জানা দরকার তাঁদেরও। সর্বত্র রাজনীতির দাপট। বিশ্বাস, মেধা, শ্রম, সৃষ্টির মত মৌলিক সত্তা হারিয়ে যাচ্ছে।প্রকট হচ্ছে দূর্নীতি। দুর্নীতির কাছে হার মানছে মৌলিক ভাবনা।এটা এক ধরনের সংক্রমণ।এভাবে চলতে থাকলে একসময় গৃহযুদ্ধের মত বিপদ অনিবার্য। তাই নিজের গন্ডির মধ্যে থেকেই প্রত্যেকের কাজ করা উচিত।বিচারপতি আবসানউদ্দিন আক্ষেপ করছেন,ভারতে আইন রয়েছে কিন্তু তার প্রয়োগ শুধু কাগজেই।

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest

Recent Posts