দীপঙ্কর বৈদ্য, বারুইপুর – সত্তরের দশকে যিনি সকলের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন, তিনি বিশিষ্ট ছড়াকার প্রদীপ মুখোপাধ্যায়।দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনে বহু পরিচিত, বহুদিনের কর্মী ২০-০৪-২০২৪ রাত একটায় চুয়াত্তর বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রক্ষণশীল পরিবারে ১৯৫০ সালে তাঁর জন্ম হলেও মা ছিলেন উদার। তাঁরই স্নেহছায়ায় শ্রী মুখোপাধ্যায় বাম মনোভাবাপন্ন হয়ে পড়েন। শ্রমজীবীদের নিয়েই তাঁর কাজকর্ম। বহু প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়েছেন। একসময় বোঝা গেল বামপন্থী বা ডানপন্থী তাঁর কাছে বড় ব্যাপার ছিল না। সাউথ গরিয়ায় জন্ম, ক্রিয়া, কর্ম হলেও আশপাশের কেন বারুইপুর তথা চব্বিশ পরগনার একজন পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। তিনি সকলকে আগলে রাখতেন। ছড়া, গল্প, ফিচার, দেওয়াল লিখন, প্রুফ সংশোধন, প্রচ্ছদ অঙ্কন, পোস্টার লিখনে ছিলেন সিদ্ধ হস্ত। এই পর্যন্ত দুটো ছড়ার বই প্রকাশ করেছেন – ‘দুই কারিগর’ (১৯৮৫) ও ‘তিন ফর্মা ছড়া’ (২০০৩)। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা – ‘তূণীর’, ‘মেদনমল্ল সংবাদ’, ‘নির্মাণ’। তিনি চম্পাহাটি লোকমেলা কমিটি ছাড়াও বহু সাহিত্য সংস্কৃতি কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অনেকে উদ্যোগ নিয়ে তাঁর বই প্রকাশ করতে চেয়ে, অনেকখানি এগিয়ে গিয়েও হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত না করে দিয়েছেন। একটা অলসতা কাজ করত, তবে সব জিনিসের একটা পারফেকশনে পৌঁছাতে চাইতেন। তাঁর ছায়ায় বড় হয়েছেন অসংখ্য প্রতিষ্ঠিত ও অপ্রতিষ্ঠিত কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, দেওয়াল লেখক। প্রতিষ্ঠান বিরোধী ছিলেন কিনা জানা নেই, তখনকার দিনে বি.কম. পাস, ব্যাঙ্কের চাকরি পেয়েও তিনি করেননি। খুবই কায়ক্লেশে দিন কাটাতেন। এমনকি বাড়ির রান্নাটাও তাঁকে করতে হত। তবু তিনি সকলের। কোনো পন্থী তাঁকে একান্ত নিজেদের বলে দাবি করতে পারবে না। সব পন্থীর ছেলেরা তাঁর ভাই, বন্ধু, আপনজন। এককথায়, তিনি ছিলেন সাধারণে অসাধারণ। তিনি রেখে গেলেন – স্ত্রী লেখিকা নন্দিতা মুখোপাধ্যায় ও একমাত্র সন্তান নিয়নশুভ্র মুখোপাধ্যায়কে। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা।