খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
Khabor Sojasuji Logo_200x120
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী বিচার বিভাগ

তন্ময় কবিরাজ

বর্তমানে ভারতের বিচারব্যবস্থায় শাসকের হস্তক্ষেপ হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে দেশের হরিশ সালভে, মনন কুমার মিশ্র, চেতন মিত্তলের মত ৬০০জন নামিদামি আইনজীবি দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।আবার অন্যদিকে সেই শাসকের সমর্থনেই ভোটের প্রচার করছেন আইনজীবিদের একাংশ। বর্তমান ভারতের রাজনীতি এতোটাই অসুস্থ ও পক্ষপাতমূলক যে রাজনীতিতে এসে কেউ দেশের জন্য ভালো কাজ করবে এটা কেউ বিশ্বাস করতে পারেন না। বরং উল্টোটাই ভাবে এবং সেটাই হয়। রাজনীতি অর্থ আর ক্ষমতার সমাগম। শাসক সবাই সমান, দাঁড়িপাল্লাতে কেউ একটু কম তো কেউ একটু বেশি। দুর্নীতি সবার আছে।রাজনীতির দূষণ চলে আসছে আদালতেও।তাই মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিকে বলতে হয়,”আদালতের পবিত্রতা নষ্ট করবেন না।” আদালতে আইনে কথা হবে,সেখানে ন্যাচারাল জাস্টিস যেমন থাকবে তেমনি থাকবে রুল অফ ল।সংবিধান শাসনবিভাগকে বিচারবিভাগ থেকে আলাদা করার নির্দেশ দিয়েছে(৫০নং ধারা,),আবার নাগরিক জীবনের কর্তব্য সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে অক্ষুন্ন রাখা।কিন্তু শাসক বারবার বিচারবিভাগকে আক্রমণ করছে,যা গণতন্ত্রের দূর্ভাগ্য। আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা রাজনীতি করতেই পারেন,সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত অধিকার।তবে মেঘালয়ের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন, বিচারপতিদের রাজনীতিতে না আসাটাই ভালো।অন্যদিকে,যেসব রাজনৈতিক দল তাঁদের দলে নিচ্ছেন তাদেরও ভাবা উচিত।কারণ সমাজের কাছে সবার দায়বদ্ধ থাকা উচিত।২০০৬সালে “সওয়াল জবাব চলছে” শীর্ষক প্রবন্ধে সুমিত মিত্র বাম কংগ্রেসের সম্পর্ক নিয়ে লিখেছিলেন,”ওটি জটিল বিবাহ,বিচ্ছেদের দন্ড দিতে হবে দু’পক্ষকেই।” আজ মক্কেল_উকিল সম্পর্ক এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। কথাগুলো আজ উঠছে কারন কামদুনি রায়ের পর টুম্পা মৌসুমী অভিযোগ করছে, সরকারি উকিল টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। দেশের ধনী উকিল প্রবীণ বয়সে লন্ডনে বিয়ে করছেন। ভারতের মত সমাজে এ হেন জীবন যদিও সর্বজন গ্রাহ্য নয়। সংবিধানে যেমন ২১নং ধারা আছে, তেমনি কাস্টম বা প্রথার উর্ধ্বে কেউ নয়। জুরিস্প্রুদেন্স এ সালমন্ড বলছেন, কাস্টমে সমগ্র জাতির সম্মতি থাকবে। অ্যালানও সালমন্ডকে সমর্থন করেছেন। বর্তমানে আইন ব্যবসা এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে জুরিস্প্রুদেন্স এর কোন মূল্য নেই ! বিভিন্ন রাজ্যের জুডিশিয়ারি পরীক্ষায় পাঁচটা মেজর অ্যাক্টই অর্থাৎ আইপিসি, সিআরপিসি, সিপিসি, এভিডেন্স আর কনস্টিটিউশন কোর্সে পড়ানো হয়। কিন্তু আইনে জুরিস্প্রুদেন্স না পরলে যেমন ভালো বিচারক হওয়া যায় না ,তেমনি ভালো উকিলও হওয়া যায় না। তাই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন,ভালো আইনজীবী হতে হলে আগে ভালো মানুষ হতে হবে।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর থেকে যেমন নরমপন্থীদের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়েছিল মানুষ,আজ তেমনি উকিলদের উপর বিশ্বাস হারাচ্ছে। অরবিন্দ ঘোষকে বাঁচাতে এসেছিলেন আইনজীবী চিত্তরঞ্জন দাস। ইতিহাসে দক্ষ সংগঠকরা দক্ষ আইনজীবী ছিলেন। আদর্শ মূল্যবোধ ছিল। আজ অভিযোগ উঠছে,আইনজীবী পুলিশ সেটিং! আইনজীবী পুলিশ দোস্তি এমন যে ওই থানার যাবতীয় মামলা ওই আইনজীবী করবে। ফলে জুনিয়র বা অন্য উকিলের কাছে মামলা নেই। ছবিটা আরোও করুণ যখন কোর্টের বিভিন্ন অফিসে কাটমানি দিতে হয়, ফাইল দেখতে গেলে পয়সা, আসামি দেখতে গেলে পয়সা। এটাই সিস্টেম ! অপরাধের কিছু নেই ! নিচু তোলার কোর্টের অবস্থা আরো খারাপ। নিরাপত্তাহীনতা। রাজনীতি এমন জায়গায় গেছে যে সিভিল বিবাদ পার্টি অফিস থেকে আর ক্রিমিনাল কেস থানা থেকেই মিটে যায়। ভূমিসংস্কার দপ্তর তো ঘুঘুর বাসা। জেলা ভাগ হচ্ছে, কোর্টের জুরিসদিকশন কমছে। প্রশ্নটা হচ্ছে মূল্যবোধের।সেই মূল্যবোধ আজ অলীক বলেই হয়তো আবার প্রাথমিকে বর্ণপরিচয় ফিরিয়ে আনার চেস্টা চলছে।

কবি জীবানন্দ বলেছিলেন, পৃথিবীতে নেই কোন বিশুদ্ধ চাকরি। চারদিকে দুর্নীতির মনোপলি। সফোক্লিসের থেবসের মত নৈরাজ্য।তাই সরকার প্রতিদিন কোর্টে যাচ্ছে। তথ্য বলছে , আইনজীবীদের খরচ বেড়ে হয়েছে ৩১২.৫শতাংশ,২০১৪_১৫তে ছিল ২৪কোটি, এখন সেটা ৭৫কোটি। শুধু রাজনীতি মামলা। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন, এতো রাজনীতি মামলা শুনলে বাকি মামলা কখন শুনব ? পুলিশ প্রশাসন সঠিক তথ্য পরিবেশন না করলে আইনের ফাঁক গলে যে কেউ পালিয়ে যাবে। রাজনীতির চাপ যে কত গভীর তা এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সুধীর আগরওয়ালের কথায় বোঝা যায়।অযোধ্যা মামলায় তাঁর উপর ছিল সে কথা তিনি স্বীকার করেছেন।

আজ রাজ্যজুড়ে হাজার খানেক ল কলেজ। প্রতি বছর কয়েকশ আইনজীবী পাস করছেন।কিন্তু নির্ভীক আইনজীবী কোথায় ? যাঁদের নামডাক আছে তাঁরা কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা।ফলে বিচারের নামে সাধারণ মানুষের টাকাও লুট হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জন্য সংবিধান যেমন ৩৯এ দিয়েছে _বিনা পয়সায় আইনি সহায়তা পাবার অধিকার, ৪১ডি তে আসামি তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারে। আইনজীবীর জন্য আছে অ্যাডভোকেট অ্যাক্ট ১৯৬১। সঠিক আইন জানলে মেরুদন্ড বাঁকাতে হয় না। আবার এটাও ঠিক,এটা একটা জীবিকা। শুধু বাঁচার জন্য অনেক আইনজীবী নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছে। চেতনার বিকাশ কবে হবে কেউ জানে না।তাই পুলিশ কমিশনার দিল্লি বনাম রেজিস্টর দিল্লি মামলায় আদালত বারবার ন্যায় বিচারের ধ্রুবসত্যকেই তুলে ধরেছে।

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest

Recent Posts