খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
Khabor Sojasuji Logo_200x120
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

দুর্নীতি কাঁটা সরিয়ে সংগঠন আর জনমুখী প্রকল্পের জোরেই লোকসভা ভোটে বাজিমাত করবে তৃণমূল !

তন্ময় কবিরাজ

চলছে লোকসভা নির্বাচন।এবারে সাত দফায় হচ্ছে নির্বাচন। ইতিমধ্যেই দু’দফা নির্বাচন শেষ হয়েছে।আগামীকাল ৭ মে তৃতীয় দফার নির্বাচন।২০২৪ সালের লোকসভা ভোট যে বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে তা মাস দুয়েক আগেই বোঝা গিয়েছিল যখন অমিত শাহ এবারের লোকসভা নির্বাচনকে কুরুক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।মোদি মুখে যতই চারশো আসনের কথা বলুন না কেন তিনি ভালো করেই জানেন পরিবেশ পরিস্থিতিতে জয়ের পথ অতটা সহজ নয়।কংগ্রেসকে যেমন আক্রমণ করছেন, তেমনি বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে সেই রাজ্য সরকারেরও সমালোচনা করছেন মোদি।তিনি জানেন তাঁর অ্যাসেট হলো উত্তর ভারত।দক্ষিণে নড়বড়ে অবস্থা,অন্ধ্রপ্রদেশে নিজেদের মধ্যে বিবাদ রয়েছে, ওড়িশাতেও শেষ মুহূর্তে জোট হলো না।পশ্চিমবঙ্গের উপর তাই বিজেপির এবার পাখির চোখ। প্রায় ৩০টির মত সভা করবে বিজেপির শীর্ষ নেতারা।তবে এ রাজ্যে ঘাস ফুল সরিয়ে পদ্ম ফুল ফোটানো খুব কষ্টকর।এখন আর মোদি ঝড় নেই। শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে মিশ্র ধারণা রয়েছে জনমানসে। সব জায়গায় সংগঠন শক্ত নয়। সব থেকে বড় কথা, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের মত বিজেপি দলে সর্বজনগ্রাহ্য নেতা নেই। অভিষেক বন্দোপাধ্যায় দক্ষতার সঙ্গে সংগঠন দেখছেন, নিচু তোলার কর্মীদের মনোবল বাড়াচ্ছেন। নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নবীন প্রবীণের ভারসাম্য রক্ষা থেকে প্রকল্পের টাকা বৃদ্ধি সব কিছুতেই রয়েছে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের ভূমিকা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাই তাঁর উপর ভরসা রাখতে পারছেন।উত্তরবঙ্গ ঝড়ে বিপর্যন্ত হবার পরে দিলীপ ঘোষ যখন বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন,তখন অভিষেক বন্দোপাধ্যায় বলছেন, কেন্দ্র আবাসের টাকা দিলে এতো ক্ষতি হতো না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন,নির্বাচন কমিশন অনুমতি দিলে তারা ঘর করে দেবে।বাংলায় বিজেপি গত বিধানসভায় ভালো ফল করেছিল কিন্তু তাতে ডুবে থাকলে চলবে না কারণ পঞ্চায়েত ভোটের ফল আশানুরূপ হয়নি।বিধানসভা ভোটে বিজেপি কোচবিহার,জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলাতে প্রায় ৪৫ শতাংশের উপর ভোট পেয়েছিল।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার উত্তরবঙ্গের জন্য ভালো কাজ করলেও ভোটের বাক্সে তার তেমন প্রভাব পড়েনি।সেই ক্ষোভের কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার জলপাইগুড়িতে বলেছেন,”বিপর্যয়ের সময় কিন্ত বিজেপি পাশে থাকে না।”শুধু বিভাজন, ধর্ম আর বাইরে থেকে নেতা এনে ভোট করলে বিজেপির ভোট বাড়বে না।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন,গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভোট বেড়েছিল কারণ বাম কংগ্রেসের ভোট সেখানে ছিল,কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে বাম কংগ্রেস আগের ভোট ফিরে পাওয়ায় বিজেপির ভোট বাড়েনি।অর্থাৎ তৃণমূলের কিছু নির্দিষ্ট ভোটব্যাঙ্ক অটুট রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে তৃণমূলের ছিল ৫১.১৪শতাংশ আর বিজেপির ২২.৪৪শতাংশ।বিজেপির উত্তরবঙ্গের ভোট ধরে রাখতে শীর্ষ নেতারা তৎপর।ইতিমধ্যে পাহাড়ে গুরুং বিজেপিকে সমর্থন করেছে।তবে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জেলাতে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে।অভিমানী জন বার্লা তো বলেছিলেন,”চা বাগানে বিজেপিকে ঢুকতে দেবো না।” জঙ্গলমহলের জেলাগুলোতে বিজেপির সম্ভাবনা উজ্জ্বল কারণ সেখানে বিভাজন ফ্যাক্টর আছে।রঘুনাথপুরে নতুন শিল্পের সম্ভাবনা তৈরি করেছে সরকার।গত বিধানসভা ভোটে বাঁকুড়া পুরুলিয়ার নির্বাচনে তৃণমূল আর বিজেপির ভোট ব্যবধান ছিল খুব কম।তবে দক্ষিনবঙ্গের জেলাগুলোতে তৃণমূলের একচেটিয়া দাপট। বিজেপির রাজনীতির বড়ো সমস্যা, তারা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ধরনটা বোঝেনা। তাছাড়া রাজ্যে দলটার বেশির ভাগই অন্য দল থেকে নেতা কর্মী ভাঙিয়ে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই কটাক্ষ করে বলেছেন,”আমাদের আপদ বিজেপির সম্পদ।” তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে বিজেপির অনেক অস্ত্র ছিল কিন্ত বিজেপি সেগুলো বাদ দিয়ে পরিবার,ব্যক্তি এইসব আক্রমণ করছে।ইস্যু ভিত্তিক প্রচারের বাইরে চন্দ্রবোরা, দাদাগিরি এসব চলছে।পরিবর্তনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনমানসে যে আবেগ তৈরি করেছিল, বিজেপি সেই আবেগ তুলতে ব্যর্থ। জনসংযোগ নেই,ভোটের দিশা নেই। উল্লেখ্য, এবার ভোটে এ রাজ্যে ১৮ থেকে ১৯ বছরের ভোটারের সংখ্যা ১৫ লক্ষ ৭২ হাজার ৪৫৫ জন,২০ থেকে ২৯ বছরের ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৯ হাজার ৮১ জন।এই তরুণ সমাজের কাছে বিজেপি দিশা দেখাতে ব্যর্থ। দেশে বেকারত্ব চরমে, তৃণমূল সেটাকে পাল্টা হাতিয়ার করছে।তৃণমূল সরকারের বেকারত্বের সঙ্গে মিশে গেছে চাকরি দুর্নীতি,নেতা মন্ত্রীরা জেলে।কিন্তু তা সত্বেও তৃণমূল সরকার যুবশ্রী,গতিধারা, কর্মতীর্থ, উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে বিক্ষোভের প্রলেপ দিচ্ছে। মেয়েদের জন্য রয়েছে একগুচ্ছ প্রকল্প কন্যাশ্রী, মাতৃযান, চাষীদের জন্য সুফল বাংলা, পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য স্নেহের পরশ, তাছাড়া খাদ্যসাথী, স্বাস্থসাথী তো আছেই।সামগ্রিক যা পরিস্থিতি তাতে এখনও পর্যন্ত সবুজের পাল্লাই ভারি।এই পরিস্থিতিতে গ্রামের প্রান্তিক মানুষ কতটা বিরোধী আবির মাখবে এখন সেটাই দেখার।তবে শতাংশে ভোট কাটাকাটি তো হবেই।সব দলেরই কমবেশী দুর্নীতির কালির দাগ লেগে আছে।রাজ্যের মোট ৭ কোটি ৫৯ লক্ষ ১৯ হাজার ৮৯১ জন ভোটারের মধ্যে মহিলা ভোটার ৩ কোটি ৭৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫১১ জন যাদের মধ্যে অনেকেই রাজ্য সরকারের লক্ষ্মী ভান্ডারের মত সুবিধা পাচ্ছে।গ্রামীণ ভোটে এই সব প্রকল্পগুলোই তৃণমূলের ভরসা।এবারের ভোটে রাজ্যে ৮৫ বছরের উর্ধ্বে বয়সের ভোটার আছে ৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ১৮৭ জন।বিরোধীরা মনে করছে, তৃণমূল এইসব ভোটে কারচুপি করতে পারে। তাছাড়া প্রবীণ ভোটার বা বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ভোটাদের প্রভাবিত করে রাজনৈতীক দলগুলো।তাই যেখানে ভোট শতাংশের ব্যবধান কম সেখানে এইসব ভোটই ফ্যাক্টর হয়ে যাবে। তবে দেখার বিষয়,বাম কংগ্রেস কতটা ভালো ফল করতে পারে ? মীনাক্ষী, সৃজনদের তরুন ব্রিগেডের উপর ভরসা করছে বাম দলগুলো।বিরোধিদের ভোটে ভালো ফল করতে হলে সংগঠন মজবুত করতে হবে,কর্মীদের অনুপ্রেরণা দিতে হবে।এবারে প্রচণ্ড গরমে ভোট।নির্বাচন কমিশনও ইতিবাচক সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।ফোরএম এর দাওয়াই দিয়েছে।রাজ্যের গত নির্বাচনের হিংসার রিপোর্ট দেখতে চেয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, গত দুবছর তারা নিরলস পরিশ্রম করেছে সুষ্ঠ ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য।এত আয়োজন যাদের জন্য সেই জনগণ যাতে গনতন্ত্রের উৎসবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে যথাযথ সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।সংগঠন আর জনমুখী প্রকল্পের জোরে তৃণমূল এবার বাজিমাত করতে পারে কি না সেটাই এখন দেখার।গণতন্ত্রে মানুষই কিন্তু শেষ কথা বলবে।

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest

Recent Posts