খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

দার্জিলিং/মন্দিরা মুখার্জ্জী (ব্যানার্জ্জী)

চারজন আমরা ট্রেনে চড়ে বসলাম নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে | করোনার পর হাঁপিয়ে উঠেছিলাম বাড়িতে , তাই ঠিক করলাম আমি , আমার বৌমা / মেয়ে ( রোজী ) , আমার দিদি ( তৃপ্তিদি ) , আর নাতনি শরণ্যা দার্জিলিং ঘুরে আসি | আমার ছেলের বন্ধু হোটেলের ঘর বুক করে রেখেছে বললো , অতএব নিশ্চিন্ত | ট্রেনে রাতে উঠে খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা , আমার সেটা হয় না , এতো দুলুনি , তার উপর একটা নেশা ছোট্ট থেকে , রাতের প্রকৃতির সাথে একটু মোলাকাত করা , সারারাত তার সাথে চোখের উপর চোখ রেখে সময় কেটে যায় , অনেকদিন দেখা হয়নি | ভোরে তাকে বিদায় জানিয়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে , গাড়িও বলা ছিল , তাতে চেপে রওনা দিলাম দার্জিলিং | আমার চরিত্র দোষ আছে মনে হয় , তাই দিনের প্রকৃতির প্রেমে মশগুল হয়ে পাঁচ ঘণ্টা কাটিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম | হোটেল ‘ পাইন্ ট্রি ‘ , বিশাল হোটেল , এখানে আগেও এসেছি , যিনি ম্যানেজার , ঘরের চাবি দেওয়ার সময় অনেকক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকায় আমার একটু সন্দেহ হয় , আমি প্রশ্ন করি কি ব্যাপার ! কোনও সমস্যা ? আমি তো আগেও এখানে এসেছি , উনি বললেন জানি তো , মুচকি হেসে চাবি দিয়ে বললেন , যান রেস্ট করুন , চা দিচ্ছে রুমে | যাচ্ছি যখন আমি বললাম , এদিকে তো কোনোদিন থাকিনি ! কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে বাঁ দিকের ঘর , ঢুকে দেখলাম আগের সাহেবদের বিশাল ঘর , একটি ঘরেই দুটি ডাবল বেড বড় বড় , ফায়ার প্লেস , বড় সোফা ,টেবিল , ড্রেস করার আলাদা জায়গা একটু এলাহি ব্যাপার | আমি বললাম আরে এই ঘরে থাকা তো প্রচুর পরিমাণে খরচ | রোজী বললো তুমি এতো এখন ভেব না, এটা তোমার ছেলের ব্যাপার , ওকে ভাবতে দাও I এরা সবাই জানে আমি কোথাও গেলে আগে ছবি ও ভিডিও করে নেওয়া আমার নেশা , ভিডিও শুরু করে দিয়েছি , ঘরের মধ্যে করে বাইরে গিয়ে করতে থাকলাম , ইংরেজ আমলের সবকিছু , এখনও সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছেন এঁনারা I সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছেন কেউ , কাঠের সিঁড়ি , বুট জুতোর মচমচ আওয়াজ , তাই আমি ভিডিও করতে করতে সামনের দিকে সরে যেতে লাগলাম , পিছন দিয়ে যাওয়ার অসুবিধা যেন না হয় , আমার পাশে আসায় মুখ ফিরিয়ে দেখলাম ওঁনার যেতে অসুবিধা আছে কিনা , কিন্তু কেউ তো নেই ! আমার মনের ভুল কি ? হবে হয় তো , আবার উপর থেকে নিচে ভিডিও তুলে ঘরের বাইরে তুলে যাচ্ছি , সেই একই আওয়াজ , আমি তখন সিঁড়িটাই তোলার জন্য চেষ্টা করলাম , দেখি মনের ভুল কিনা ! কই , কেউ এলো না তো ! আমার গাটা শিরশির করে উঠলো , ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললাম সকলকে ম্যালে ঘুরে আসবো বিকালেই | দরজায় কলিং বেল , কফি দিয়ে গেল , রাতের খাওয়ার অর্ডার নিয়ে গেল I বেশ ঠান্ডা তাই কফিটা আরামদায়ক I তৃপ্তিদি বাথরুমে গেল , আমরা সেট করে নিচ্ছি , তৃপ্তিদি ওখান থেকে চেঁচাচ্ছে আরে লাইট অফ করলি কেন ? আমি বললাম আমরা করিনি , সুইচ তো দেওয়া আছে ! তবে কি সুইচের গণ্ডগোল ! ফোন করে বলায় , ওঁনারা এসে দেখে বললেন সব ঠিক আছে , যাওয়ার সময় তাকিয়ে একটু হেসে দিল , আমার খুব রাগ হতে লাগলো , কারণ , আমরা চারজনই মেয়ে I আমরা আবার তৈরি হতে থাকলাম , শেষে দিদি আবার বাথরুমে ঢুকে সেই এক চিৎকার , লাইট অফ করলি কেন ? আমি সয়েটার পড়তে গিয়ে পিছনে ফিরে দেখা মাত্র আমার নাতনির শরণ্যা চিৎকার আ আ করে , ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও শুয়ে পড়ে কম্বল মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে আমার দিকে আঙুল তুলে , পিছনে ফিরে তাকাতে দেখি একটা একটা করে লাইট অফ হয়ে যাচ্ছে , আমি খুব ভয় পেয়ে শরণ্যার কাছে ছুটে যাই , তৃপ্তিদিও ছুটে বেরিয়ে এসে দেখে সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে | আবার ঠিক হয়ে যায়, আমরা আবার আমাদের মনের ভুল ভেবে ম্যালে ঘুরতে যাই , কিন্তু মনে একটা খটকা ঘুরতে থাকে | সন্ধ্যা হয়ে যেতে ফিরে আসি , আমার অনলাইন কম্পিউটার পরীক্ষা আছে , এসে কফি খেয়ে আমি পরীক্ষা দিতে বসি , ওরা বিছানায় লেপের তলায় | আমার পরীক্ষা হওয়ার পর সাবমিট করেছি , হঠাৎ ফোনটা হাত থেকে পড়ে সব নষ্ট হয়ে গেল ! অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারিনি | রাত্রি ৯ টায় ডিনার দিতে এলো হোটেলের বয় , কি অস্বাভাবিক লম্বা ও সাদা আমি বলে বোঝাতে পারবো না , ওর চোখ দুটো কেমন , আমার আবার গা টা শিরশির করে উঠলো , আমি বললাম কাল সকাল হলেই চলে যাব , সকলেই ভয় পেয়ে আছে তাই রাজি হয়ে গেল , খেয়ে সকলে রুম হিটার চালিয়ে লেপের তলায় আশ্রয় নিল , আমি বাথরুমে গিয়ে দেখি সব জলের কল দিয়ে জল পড়ে যাচ্ছে , আমি বললাম , তোরা জল খুলে গেছিস কেন ? সকলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে , কেউ তো এমন করিনি ! আমি এসে সব বন্ধ করে শুলাম কিন্তু ঘুমাতে পারছি না , সারাদিনের ঘটনাগুলো মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে | বেশ রাত্রি , সুন্দর একটা মিষ্টি সুর ভেসে আসছে টুং টাং শব্দ করে , কাঁটা চামচ, কাপ ডিসের আওয়াজ , অনেক লোক মনে হচ্ছে যেন পার্টির মতো কিছু করছে , ঘড়ি দেখলাম ৩ টে বাজে , এখন তো এই সময়ে দার্জিলিং – এ কোনও হোটেলে কেউ আসবে না বা খাবে না, এদের একটা সময় বাঁধা আছে পাহাড় বলে | আবার সেই জুতোর মচমচ আওয়াজ , কান পেতে শুয়ে আছি , আমাদের ঘরের কাছে এসে থেমে যাচ্ছে ! আমি কাঠ হয়ে শুয়ে আছি , সকাল হওয়ার অপেক্ষায় , কখন একটু তন্দ্রা এসে যায় , ঘুম ভাঙে কলিং বেলের শব্দে , চা ও ব্রেকফাস্ট আসে , আমরা তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে ব্রেকফাস্ট করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসি | রিসেপশনে চাবি দেওয়ার সময় ওনারা অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকায় আমি প্রশ্ন করি , আচ্ছা , কাল আমারা একটু অসুবিধা ভোগ করি ঘরে , আগেও এসেছি কিন্তু এমন তো হয়নি ! ওঁনার সাথে কথা বলে চোখ কপালে উঠে গেল | উনি বললেন , দেখুন এই হোটেলে ওই ঘরগুলোয় কেউ থাকতে পারেননি ! বিশেষ করে ১১১ নম্বর ঘর, যেটাতে আপনারা ছিলেন , ওইখানে আগে ইংরেজরা গুম করে রাখতেন বিপ্লবীদের , তাতে অনেকের মৃত্যু হয় , ওইখানে কেউ এক রাত্রি থাকতে পারেননি , তাই অবাক হয়ে গেলাম আপনারা কেন ওই রুমে এসে উঠলেন ! যিনি বুক করেছেন তিনি কি জেনে করেছেন ? আমি বললাম , আপনি কেন বলেননি ? উনি বললেন , আপনারা যে জানেন না , তা তো আমি জানি না ! সেইজন্য আমরা পাশে আবার ঘর তুলে নিয়ে আলাদা করে হোটেল বানিয়ে চালাচ্ছি , সেখানে কোনও অসুবিধা নেই | আপনাদের ভাগ্যভাল কিছু অঘটন ঘটে নি I আমি বলি , রাতে কি ওখানে কেউ পার্টি বা খাওয়া দাওয়া করছিল ? উনি বললেন, না না , ওদিকে কেউ সন্ধ্যার পর যায় না |

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest

Recent Posts

author-avatar
  • October 30, 2024

মাইক্রো ফিনান্স সংস্থার লোন নিয়ে চড়া সুদের চক্রে পড়ে সর্বসান্ত হচ্ছে গ্রাম বাংলার সাধারণ গরিব মানুষ।লোনের কিস্তি দিতে না পারলে বাড়ি বয়ে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে মাইক্রো ফিনান্স সংস্থার কর্মীরা,অভিযোগ।রাত দশটা এগারোটার সময়েও এসে দরজায় কড়া নাড়ছে,অভিযোগ।আরও অভিযোগ,লোনের কিস্তি দিতে না পেরে মাইক্রো ফিনান্স সংস্থার কর্মীদের হুমকির ভয়ে অনেকেই ঘরছাড়া।আত্মীয় স্বজনের বাড়ি গিয়েও নিস্তার নেই ! সেখানেও হানা দিচ্ছে লোন আদায়কারীরা,দিচ্ছে হুমকি।লোন দেওয়ার সময় তাদের মোবাইল,টর্চ লাইট সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র চড়া সুদে কিনতেও বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।লোনের কিস্তির টাকা পরে দেব বললেও রেহাই পাচ্ছে না গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া গরিব মানুষ।একটা লোন শোধ করতে গিয়ে নতুন করে আবারও লোন নিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।লোনের কিস্তি আদায়ের নামে এভাবে কি যখন তখন বাড়িতে এসে হুমকি দিতে পারে মাইক্রো ফিনান্স সংস্থার কর্মীরা,উঠছে প্রশ্ন।চাপে পড়ে লোনের টাকা দিতে না পেরে যদি কেউ সুইসাইড করে তাহলে তার দায়িত্ব মাইক্রো ফিনান্স সংস্থার কর্মীরা নেবে তো, উঠছে প্রশ্ন।

author-avatar
  • October 30, 2024

ঘূর্ণিঝড় দানা’র প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি কতটা তা খতিয়ে দেখতে কৃষি মন্ত্রী ও পঞ্চায়েত মন্ত্রীকে জেলায় গিয়ে সমীক্ষা তদারকির নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

author-avatar
  • October 30, 2024

আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগে দিকে দিকে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।আবাস যোজনার সার্ভের কাজে যেন কোনো অস্বচ্ছতা না থাকে,সতর্ক বার্তা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের।

author-avatar
  • October 12, 2024

ধনেখালি ব্লকের মধ্যে অভিনবত্বের দিক থেকে আমাদের চোখে সেরা প্রতিমা দশঘরা স্কুল পাড়া দুর্গা পুজো কমিটির প্রতিমা।

author-avatar
  • October 12, 2024

বেপরোয়া বাইক চালকদের দৌরাত্ম্যে আতঙ্কিত পথ চলতি সাধারণ মানুষজন