আমিনুর রহমান, বর্ধমান — সব রকমের স্বাস্থ্য পরিষেবায় জিএসটি তুলে দেবার জোরালো দাবি তোলা হলো ওয়েস্ট বেঙ্গল সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভস ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। শহর বর্ধমানে এবার ওই সংগঠনের ৪৯ তম রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে । তার আগে সাংবাদিক সম্মেলনে বিক্রয় প্রতিনিধিরা বেশ কয়েকটি দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরেন। ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি লোক সংস্কৃতি মঞ্চে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে এদিন সংগঠনের তরফে বর্ধমানের একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন কর্মকর্তারা। উপস্থিত ছিলেন অল ওয়েস্ট বেঙ্গল সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভস ইউনিয়নের সম্পাদক জয়ন্ত কুমার পাঁজা, রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি অরুনাভ ধর, রাজ্য সম্মেলনের আহ্বায়ক পলাশ চক্রবর্তী, সংগঠনের আঞ্চলিক সম্পাদক সোমনাথ বসু প্রমুখ।সম্পাদক জয়ন্ত কুমার পাঁজা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এবারের রাজ্য সম্মেলনে সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ বা বিক্রয় প্রতিনিধিদের পেশাগত বিভিন্ন দাবি দাওয়ার পাশাপাশি সার্বিক জনস্বার্থেও বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হবে। এই রাজ্য সম্মেলনে ‘সেলস প্রমোশন এমপ্লয়ীজ অ্যাক্ট-১৯৭৬’কে অক্ষুণ্ণ এবং শ্রম-কোডগুলি বাতিলের দাবি রাখা হবে বলে ঘোষণা হয়। অন্যদিকে সম্মেলনের আগে সংস্কৃতি লোক মঞ্চের অ্যানেক্স হলে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সাথে আলোচনা সভা বিকাল অনুষ্ঠিত হলো । বিষয় ছিল ‘শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি শ্রেণীর ঐক্য – বঞ্চিত মানুষের বর্ম’। এই আলোচনা সভায় চিকিৎসক, কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট ইত্যাদি সংগঠন এবং কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। সাংবাদিক সম্মেলনে ওষুধ ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম এর ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১৮ শতাংশ জিএসটি প্রত্যাহার করার মূল দাবি তুলে ধরা হয়। বলা হয়েছে এতে অতি সাধারণ মানুষের সুরাহা হবে। সম্মেলন উপলক্ষে প্রায় ২৫০০ জন সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ জাতপাত, ধর্ম, মেকী জাতীয়তাবাদ, মেকী দেশপ্রেম ইত্যাদি বিভাজনী কৌশলের বিরুদ্ধে এবং সব রকমের বৈষম্য অবসানের সমর্থনে শ্লোগান তুলে বর্ধমানের রাস্তায় মিছিলে হাঁটবেন।রাজ্য সম্মেলনে ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইসের উপর কঠোর দাম নিয়ন্ত্রণ বিধি আরোপ এবং জিএসটি প্রত্যাহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে। ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’-কে বাস্তবায়িত করতে জিডিপির অন্ততঃ ৩ শতাংশ খরচ করার দাবিও রাখা হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। ‘দক্ষ’-এর পরিবর্তে ‘অতি-দক্ষ’ শ্রমিকের মর্যাদা সহ মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের ন্যূনতম মজুরি অবিলম্বে ঘোষণা করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে দাবি রাখার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। অল ওয়েস্ট বেঙ্গল সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভস ইউনিয়ন-এর সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ রায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে কৃষি ও কৃষক আজ সংকটে। ম্যনুফ্যাকচারিং শিল্পও উন্নত প্রযুক্তির কারণে পুঁজিনির্ভর, ক্রমশ সঙ্কুচিত। বাড়ছে পরিষেবা শিল্পে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা। ওষুধ ও ভোগ্যপণ্য শিল্প এর অন্যতম। ‘প্রোডাক্ট’ বিক্রির সব দায় পরিপূর্ণভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বিক্রয় প্রতিনিধিদের উপরে। অথচ ‘সেলস প্রমোশন এমপ্লয়ীজ অ্যাক্ট’ আজ শ্রম কোডের ফেরে বাতিল হয়েছে – সুরক্ষা-সুবিধা সঙ্কুচিত। এদের ন্যূনতম মজুরি এবং ওয়ার্কিং রুলস লাগু করা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য কোনও সরকারই ঐকান্তিক নয়। ফলে সর্বস্তরের রিপ্রেজেন্টেটিভদের উপর বাড়ছে কাজের চাপ, পাশাপাশি মজুরি বঞ্চনা।জয়ন্ত বাবু জানান, সামগ্রিক ভাবে বঞ্চনা ও দাবি দাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে এই সম্মেলন থেকেই আগামী দিনের আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি হবে।