বিদ্যুৎ ভৌমিক : একেই বলে প্রতিভার স্ফূরণ ।তা না হলে অভীষ্ট (পড়ুন কাঙ্ক্ষিত)লক্ষ্যে পৌঁছানো এতই সহজ ব্যাপার নয় ।সেই সুপ্ত প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে জেলা ও রাজ্য ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে উপর্যুপরি স্বর্ণ পদক জিতে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ক্রীড়াঙ্গনে আলোড়ন তুলে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়ে নদিয়া জেলার ধুবুলিয়া ব্লকের অধিন অখ্যাত শোনডাঙা গ্রামের উঠতি লড়াকু সম্ভাবনাময় অ্যাথলিট শোনডাঙা হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণিতে পাঠরতা ষোড়শী তনয়া রেজওয়ানা মল্লিক হেনা নিজের সম্পর্কে অকপটে বলতে পারেন- এখনও তো কিছুই করিনি ।আমার পা এখনও সেই মাটিতেই।অনেক দূর এগোতে হবে আমাকে ।আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে ।আরও পদক জিততে হবে ।নিজেকে বলছি, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস যেন আমাকে ঘিরে না ধরে ।নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা দেখেই গত এপ্রিল মাসে (২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল)উজবেকিস্তানের তাসখন্ডে আয়োজিত জীবনের প্রথমে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অনূরধ্ব ১৮বিভাগে ৪০০মিটার ৫২-৯৮ সেকেন্ডে শেষ করে স্বর্ণ পদক জয়ের স্বাদ গ্রহণ করে এশিয়ার সব থেকে দ্রুততম মহিলা হিসাবে রেকর্ড বুকে নিজের নাম লিপিবদ্ধ করেছেন বঙ্গতনয়া রেজওয়ানা ।আসলে তাসখন্ডে ২ টি সোনার পদক জিতে নদিয়ার সোনার মেয়ের মনোবল বেড়ে যায় তুঙ্গে ।এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার ইচিয়ন শহরে আয়োজিত (অনুষ্ঠিত হয় ৪- ৭ জুন) মহিলা অনূরধ্ব ২০ এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে ২ টি স্বর্ণ পদক ও ১ টি ব্রোঞ্জ পদক জয় তাকে সাফল্যের শীর্ষ স্হানে আরোহণ করতে সাহায্য করেছে ।
রেজওয়ানার বাবা মুহাম্মদ রেজাউল ইসলাম মল্লিক ও মা অনিমা মল্লিক দুজনেই এক সময় কবাডি খেলোয়াড় ছিলেন ।বর্তমানে রেজাউল মল্লিক গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যারা টিচার।রেজাউল মল্লিকের ইচ্ছে ছিল তার মেয়ে অ্যাথলেটিক্স জগতে আসুক ।রেজওয়ানার যখন ৬ বৎসর বয়স তখন ছোট্ট একরত্তি পুচকে মেয়েকে তার বাবা বলেছিলেন- অলিম্পিকে পদক আনতে হবে ।রেজওয়ানার কথায়,বাবা-ই আমাকে ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন ।জানি না,বাবা কী ভেবে বলেছিলেন ।তবে তার এই কথা আমাকে এখনও বারবার অনুপ্রাণিত করে ।
রেজওয়ানার বাবার সেই অনুপ্রেরণায় রেজওয়ানার স্বপ্ন পূরণের সদিচ্ছায় আগামী ১৪ জুলাই ব্যাংককে আয়োজিত সিনিয়র এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় রেজওয়ানার সিনিয়র দলে অংশগ্রহণ করার ছাড়পত্র মিলেছে তারই অভাবনীয় সাফল্যের নিরিখে ।এখন প্রস্তুতি শিবির চলছে তিরুবনন্তপুরমে ।রেজওয়ানা ৪×৪০০ মিটার ও মিক্সড রিলেতে নামবে ।সেই মতো কঠোর অনুশীলনে মগ্ন রেজওয়ানা ।অনুশীলনের ফাঁকফোকরে স্কুলের পড়ায় মনোযোগে নিবিষ্ট ।
সাফল্য তাকে ছুটিয়ে নিয়ে যায় ।সে কারণে রেজওয়ানা সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে ।জুনিয়র থেকে সিনিয়র দলে অংশ নেবার সুযোগ লাভ করেছে তারই অভাবনীয় পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে প্রচারের আলোয় আলোকিত হয়ে ।তার আইকন আমেরিকার কিংবদন্তি স্প্রিন্টার অ্যালিসন ফেলিকস ।অক্লান্ত পরিশ্রমের পাশাপাশি আত্মত্যাগের বিনিময়ে রেজওয়ানা নিজেকে গড়ে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।২০২১ সাল থেকে বেঙ্গালুরুতে অর্জুন অজয়ের অধিনে রেজওয়ানা প্রশিক্ষণ চালিয়ে দেশ বিদেশের ট্র্যাকে মাতিয়ে দিচ্ছেন ।বাংলার প্রশিক্ষক কুন্তল রায়ের ভাষায় রেজওয়ানার মধ্যে অগাধ সম্ভাবনা আছে ।