অসাধ্য সাধন করে প্লে অফে আরসিবি,রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে একগুচ্ছ রেকর্ডের মালিক কোহলি
ধোনি-জাদেজার অনবদ্য যুগলবন্দির পরও আইপিএল অভিযান শেষ চেন্নাইয়ের
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু: ২১৮/৫ (কোহলি-৪৭, ডু প্লেসিস-৫৪, শার্দূল- ৬১/২)
চেন্নাই সুপার কিংস: ১৯১/৭ (রাচীন-৬১, জাদেজা-৪২*, দয়াল-৪২/২)২৭ রানে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
অস্তিত্বের লড়াইয়ে বাজিমাত রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর। এভাবেও প্লে অফে পৌঁছনো যায়। আরসিবি ভক্তরা নিশ্চিত ভাবেই নিজেদের গায়ে চিমটি কেটে দেখলেন। স্বপ্ন দেখছেন না তো? সত্যিই এমনটা ঘটেছে। তাও আবার ধোনির চেন্নাইকে মাটি ধরিয়ে সমস্ত হিসেব নিকেশ মিলিয়ে প্রথম চারে জায়গা করে নিয়েছে আরসিবি। অবিশ্বাস্য বললেও যেন মনের ভাব ঠিকভাবে প্রকাশ পায় না।ডু অর ডাই। করো অথবা ছিটকে যাও। দুই টিমের জন্যই এই ছিল শনিবারের সমীকরণ। আবার বেঙ্গালুরুকে শুধু জিতলেই হবে না, অন্তত ১৮ রানের ব্যবধান বজায় রাখতে হবে। এহেন পরিস্থিতিতে কোনও অধিনায়ক টস হারলে, অর্ধেক আত্মবিশ্বাস যেন সেখানেই সঙ্গ ছাড়ে। আর তার পর যদি দোসর হয় বৃষ্টি, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু ভাগ্য হোক বা প্রকৃতি, সব প্রতিকূলতাকেই পারফরম্যান্স দিয়ে মাতিয়ে দিল আরসিবি।শনিবার চিন্নাস্বামীতে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসকে ২৭ রানে হারালেন বিরাট কোহলিরা। এই জয়ের পর ১৪ ম্যাচে আরসিবির পয়েন্ট চেন্নাইয়ের সমান ১৪। কিন্তু রান রেটের নিরিখে মহেন্দ্র সিং ধোনিদের (০.৩৯২) টপকে প্লে-অফে পৌঁছে গেল ফাফ ডু’প্লেসির দল (০.৪৫৯)। উল্লেখ্য, টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বেঙ্গালুরু তোলে ৫ উইকেটে ২১৮।জবাবে ৭ উইকেটে ১৯১ রানে থামে চেন্নাই। ৩৯ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা ডু’প্লেসি। প্লে-অফের জন্য এদিন অন্তত ১৮ রানে জিততে হতো বেঙ্গালুরুকে। অর্থাত্, ২১৯ রান তাড়া করা চেন্নাই ২০১ তুললেই নকআউটের টিকিট অর্জন করত। এমন পরিস্থিতিতে শেষ ওভার পর্যন্ত গড়াল ম্যাচ। ৬ বলে ১৭ রানের প্রয়োজন ছিল চেন্নাইয়ের। যশ দয়ালের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু পরের বলে বড় শট মারতে গিয়ে বাউন্ডারির ধারে ক্যাচ আউট তিনি। যশের তৃতীয় বল ডট। চতুর্থ ডেলিভারিতে এল এক রান। অর্থাত্, শেষ দুই বলে তখন দরকার ১০ রানের।কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজা চেন্নাইকে জয়ের কড়ি এনে দিতে ব্যর্থ। যশের পঞ্চম ডেলিভারি ডট হতেই আরসিবি শিবিরে উৎসব শুরু হয়ে যায়। শেষ বলেও কোনও রান হয়নি। টানা ছ’টি ম্যাচ জিতে প্লে-অফে পৌঁছনোর খুশিতে বাঁধনছাড়া উল্লাসে মাতেন বিরাটরা।আসলে চেন্নাইয়ের ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়নি। আর সেটাই শেষ পর্যন্ত ডোবাল তাদের। ফর্মে থাকা ওপেনার ঋতুরাজ গায়কোয়াড় খাতাই খুলতে পারেননি। চূড়ান্ত ব্যর্থ তিনে নামা ড্যারিল মিচেলও (৪)। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন রাচীন রবীন্দ্র (৬১) ও অজিঙ্কা রাহানে (৩৩)। তবে এই দু’জন আউট হতেই চাপে পড়ে যায় চেন্নাই। ভরসা জোগাতে পারেননি শিবম দুবে (৭) ও মিচেল স্যান্টনারও (৩)। শেষদিকে অবশ্য ধোনি (২৫) ও জাদেজার (অপরাজিত ৪২) ব্যাটে চেন্নাইয়ের আশা টিকে ছিল। কিন্তু তাঁদের মরিয়া চেষ্টার পরও স্বপ্নভঙ্গ হল হলুদ-ব্রিগেডের।এদিকে, বড় রানের জন্য শুরু থেকেই বদ্ধপরিকর ছিল আরসিবি। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধের আগে তিন ওভারে উঠেও গিয়েছিল ৩১। কিন্তু বৃষ্টিতে ৪০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর কমে গিয়েছিল আরসিবি’র রানের গতি। পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভারের শেষে রান দাঁড়াল বিনা উইকেটে ৪২। ডু’প্লেসি আটকে যাচ্ছিলেন বার বার। কোহলিই টানছিলেন দলকে। চিন্নাস্বামীতে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৩০০০ রান পূর্ণ করেন তিনি। ভারতের মাটিতে টি-২০ ক্রিকেটে ৯ হাজার রানও হয়ে গেল তাঁর। এবারের আসরে ৬৪.২৬ গড়ে ও ১৫৬.৬০ স্ট্রাইক রেটে ৭০৮ রান করে ফেললেন তিনি। এদিন যদিও তিন রানের জন্য হাফ-সেঞ্চুরি হাতছাড়া হল বিরাটের (৪৭)। তবে চলতি প্রতিযোগিতায় ৩৭ ছক্কা মারলেন ভিকে, যা সর্বাধিক। ছয় মারতে গিয়ে কোহলি আউট হওয়ার পর পঞ্চাশে পৌঁছন ডু’প্লেসি। ৩৯ বলের ইনিংসে আরসিবি ক্যাপ্টেন মারেন তিনটি চার ও তিনটি ছয়। চারে নামা রজত পাতিদারের ২৩ বলে ৪১ রান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে মিডল ওভারে। গ্রিন (অপরাজিত ৩৮), কার্তিক (১৪), ম্যাক্সওয়েল (১৬) ঝড় তোলেন স্লগে।