খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

সোজাসুজি এক-এ

পার্থ পাল

যেকোনো বড় উদ্যোগের সূচনায় বুকের বল লাগে। কিন্তু তাকে টিকিয়ে রাখতে, সমৃদ্ধতর করতে লাগে ধৈর্য্য, ত্যাগ আর নিরন্তর পরিশ্রম। একটি সদ‍্যোজাত শিশুকে বুকে আগলে এক বছরের করে তোলার সমতুল যত্নে একটি স্থানীয় পাক্ষিক সংবাদপত্রকে সর্বজনপ্রিয় করার জন্য নবীন সম্পাদককে কুর্নিশ। গতবছর পনেরোই জুন জন্ম হয়েছিল ‘খবর সোজাসুজি’ পাক্ষিক সংবাদপত্রের। জামালপুর ও ধনিয়াখালি ব্লকের দুই বিশিষ্ট মানুষ – জনাব মেহেমুদ খান এবং মাননীয় সৌমেন ঘোষের শুভেচ্ছা বার্তাকে পাথেয় করে পথ চলা শুরু হয়েছিল তার। সেই সদ‍্যোজাত পাক্ষিকের চতুর্থ পৃষ্ঠায় একটি খবরের শিরোনাম ছিল – ‘খানপুরে কানানদীর উপর লকগেটের পুনর্নির্মানের কাজ শুরু হল ‘। আজ সেই লকগেট সম্পূর্ণ। এভাবেই প্রাসঙ্গিকতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে চলেছে পাক্ষিকটি। মূলত জামালপুর ও ধনিয়াখালিকেন্দ্রিক খবর থাকলেও রাজ্যের অন্য জেলার খবরও মাঝে মাঝে উঁকি দেয় এখানে। যদিও পাঠকের মূল আগ্রহ স্থানীয় খবরেই। জেলা, রাজ্য দেশ-বিদেশের খবরের জন্য বড় বড় দৈনিক ও নিউজ চ্যানেল তো আছেই। কিন্তু ২৩ নম্বর রাস্তার ধারের মৃত অথচ দন্ডায়মান গাছগুলি থেকে বিপদের খবর কে করবে? ‘কলেজ কিস্কু’ গুড়াপের বীরপুরে লটারি টাকায় তারামায়ের মন্দির গড়ছেন সে খবর জানাবে কে? গুড়াপের হাইরোডে সেনাবাহিনীর অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনার আপডেট দিয়েছিল কোন সংবাদপত্র? গুড়াপ হাইস্কুলের ভূগোলের শিক্ষক হারাধন দাস টাকিপুর মোড়ে বাসের নিচে চাপা পড়ে মারা গেলেন। সেই মর্মান্তিক খবর ছবিসমেত স্থানীয় মানুষ জেনেছিল কোথা থেকে? পলাশী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত গুড়াপ বইমেলার উদ্বোধন ও কবিসম্মেলনের সচিত্র,তথ্যনিষ্ঠ সংবাদ জানিয়েছিল কোন পাক্ষিক? এমন প্রশ্ন অনেক হলেও উত্তর একটাই – ‘খবর সোজাসুজি’। খবরের কাগজ রাজনীতি বর্জিত হতে পারে না। এই পাক্ষিকটিতেও রাজনীতি সম্পর্কিত বহু খবর থাকে। কিন্তু কোন বড় সমালোচকও প্রমাণসমেত বলতে পারবেন না যে, এটি পক্ষপাতদুষ্ট। এখানে অসীমা পাত্র, সৌমেন ঘোষ, মেহেমুদ খানের সঙ্গে সমান গুরুত্বে খবরে থাকেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, নওসাদ সিদ্দিকী, মনোদীপ ঘোষেরা। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলাতেও এখন মানসিক হিম্মত লাগে। যা সম্পাদকের পুরো মাত্রায় আছে। তবে এ পাক্ষিকের অন্যতম সম্পদ এর সাহিত্য সংস্কৃতিমূলক দ্বিতীয় পৃষ্ঠাটি। সেখানে প্রতি সংখ্যায় থাকে অত্যন্ত মূল্যবান ও প্রাসঙ্গিক সম্পাদকীয়। সেই সঙ্গে থাকে প্রবন্ধ ও ছড়া – কবিতা। মাননীয় চঞ্চল সিংহরায় ও বিশ্বরঞ্জন গোস্বামীর লেখা প্রবন্ধগুলি যেকোনো বিখ্যাত দৈনিক সংবাদপত্রে ঠাঁই পাওয়ার যোগ্য। ছড়া অংশে মাতিয়ে রাখেন বিশিষ্ট ছড়াকার বিজন দাস, বিজন গঙ্গোপাধ্যায়, সিদ্ধেশ্বর দাস এবং দীপঙ্কর বৈদ্যের মতো স্বনামধন্যরা। এমন আরও নতুন নতুন ছড়া ও প্রবন্ধকার পাঠকের সামনে আসুক ‘খবর সোজাসুজি-র মাধ্যমে। সেই সঙ্গে উঠে আসুক সেই সব জীবন সংগ্রামীদের কথা যাঁরা বিভিন্ন বাধাকে সুযোগে পরিবর্তন করে এগিয়ে চলেছেন জীবনপথে। যেমন খবরে এসেছে জাঙ্গিপাড়ার ফুটবলার গৃহবধূ কবিতা সরেনের সাফল্যগাথা। একই ভাবে হরিপালের বিকাশ প্রতিহার ও রিন্টু মালিকের ফুটবল প্রতিভার সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়েছেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক বিদ্যুৎ ভৌমিক। ‘ খবর সোজাসুজি ‘-র প্রথম উৎসব সংখ‍্যাটির কথা ফিরেছে মানুষের মুখেমুখে। আটটি ছোটগল্প, তিনটি অনুগল্প, চারটি প্রবন্ধ ও ঊনচল্লিশটি কবিতা-ছড়া নিয়ে বিয়াল্লিশ পাতার পত্রিকাটি অনেকেই কাছেই সংরক্ষণযোগ‍্য মূল‍্যবান সংগ্রহ। বসন্তকালীন সেলফি প্রতিযোগিতায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল এই পাক্ষিকটি। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এর পাঠকেরা তাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। শেষমেশ সেরা হয়েছিলেন তারকেশ্বরের দিয়া মজুমদার। এমন মজাদার প্রতিযোগিতা সংবাদপত্রের গ্রহণযোগ্যতা কে বাড়িয়ে দেয় অনেকটা। এবং তাই হয়েছে। মাত্র দু টাকা মূল্যে চারপাতার এই খবর-ক্যাপসুল সস্তায় অতিপুষ্টিকর খাদ্যের মতোই জনপ্রিয় হয়েছে। মানুষের আড্ডামহলে ঘুরপাক খেয়েছে ‘খবর সোজাসুজি’। মানুষের আরও ভালোবাসা পেলে এ পাক্ষিক রঙিন ও আরও বেশি পাতার হবে – এ আশা করাই যায়। এই কলমের পক্ষ থেকে পত্রিকার জন‍্য রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।

চ রৈ বে তি…

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest