তুষার বসু,দশঘরা, হুগলি : এই বছর হুগলি জেলার ধনিয়াখালি ব্লকের দশঘরার ১৪ ঘর বসু বাড়ির দুর্গাপুজো ৫১৭ তম বছর সম্পূর্ণ করলো খুবই আড়ম্বর সহকারে।এই বংশের প্রথম পুরুষ সীতারাম বসু এই পুজোর সূচনা করেন ১৫০৭ খ্রিষ্টাব্দে (বাংলার ৯১৪ বঙ্গাব্দে)।কথিত আছে সীতারাম বসু স্বপ্নাদেশ পেয়ে ঘট স্থাপন করে এই পুজো শুরু করেছিলেন । সমস্ত গ্রামবাসির খাওয়া পরার দায়িত্ব তার উপরেই থাকতো কিন্তু ওই বছর প্রথমে “খরা” হওয়ার পরে আচমকা “অতিবৃষ্টি” শুরু হলে কষ্টের ফসল নষ্ট হতে থাকে । প্রচন্ড ভারাক্রান্ত মনে উঠানে শুয়ে ভাবছিলেন কিভাবে সকলের অন্ন সংস্থান করবেন।ক্লান্ত শরীরে যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছেন বুঝতে পারেন নিহঠাৎ দেখেন সামনে একটা প্রকান্ড সূর্য। আর ওনার সারা শরীর তা যেন জ্বালিয়ে দিচ্ছে আর ওই সূর্যের মধ্যে একটি পুজোর ঘট প্রত্যক্ষ করেন । এর পর ধীরে ধীরে সূর্য বিলীন হতে থাকে এবং ওনার ঘুম ভেঙে যায় । দেবীর নির্দেশ বুঝতে তাঁর একটুও সময় লাগে নি । সেই মুহূর্তে তিনি মনস্থির করেন ওই স্থানে ঘট পুজো করবেন ।অকল্পনীয় ভাবে পুজো শুরুর সাথে সাথে সূর্যের আবির্ভাব ঘটে এবং জমা জল শুকিয়ে যেতে থাকে।কিছুটা হলেও ফসল রক্ষা পায় এবং গ্রামবাসিরা রক্ষা পান ।পরবর্তী কালে রামনারায়ন বসুর গ্রেট গ্রান্ড ফাদার রঘুনাথ বসু ১৬০৫ সাল থেকে একই মন্দিরে দুর্গা মূর্তি স্থাপন করে পুজো শুরু করেন । পরবর্তী কালে তিনি হুগলির ভদ্রকালী এলাকার বাসিন্দা হয়েছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে। অল্প কিছুদিন পর তার অকাল মৃত্যুতে এই পুজো চালু থাকলেও একেবারেই জাঁকজমক হারায় এবং তাঁর পরবর্তী শরিকদের পক্ষে ভদ্রকালী এবং দশঘরা দুই জায়গায় ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করা সম্ভব হচ্ছিল না । ১৭৪৫ সালে রামনারায়ন বসু এই পুজো আবার আড়ম্বর সহকারে শুরু করেন এবং স্থায়ী ভাবে দশঘরায় চোদ্দোঘর বসু বাড়িতে বসবাস শুরু করেন । ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর এক ,দু দশক পর বসু বংশের এক কন্যা রংপুরের (বাংলাদেশ) সেন বংশে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই সময়ের কিছুবছর পর এই রাণী , বসু বংশের নিত্য পুজো “ শ্রীধর মন্দির “ নুতন ভাবে স্থাপন করেন। এই “শ্রীধর” বা “নারায়ণ” বসু বাড়ির কুল দেবতা |বর্তমান প্রজন্ম এই দুর্গাপুজো ও নিত্য পুজো একই ভাবে বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছে।