প্রতি বছরই নভেম্বরের গোড়ায় আলু চাষের সময় সারের জোগানে ঘাটতির ফলে তৈরি হয় একটা সঙ্কট।যদিও অনেকেই মনে করেন কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয় এই সঙ্কট।আর এর সদ্ব্যবহার করে ফুলে ফেঁপে ওঠে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী।সারের নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি দামে চাষীদের সার কিনতে হয়। এনপিকে ১০:২৬:২৬ সারের সঙ্গে আবার জোরপূর্বক অন্য কোনো সার বা কৃষি সামগ্রী ট্যাগ হিসেবে জুড়ে দিয়ে চাষীদের নিতে বাধ্য করা হয়।দেওয়া হয় না যথাযথ রসিদ।জমি তৈরির জন্য চাষীর প্রথম পছন্দ এনপিকে ১০:২৬:২৬ সুষম সার।আর এই সার নিয়েই প্রতিবছর কালোবাজারির অভিযোগ ওঠে।প্রতি বস্তা এনপিকে ১০:২৬:২৬ সারের নির্ধারিত মূল্য যেখানে ১৪৭০ টাকা, সেখানে বাজার মূল্যের চেয়ে তিনশো থেকে চারশো টাকা বেশি দামে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চাষীরা সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।কোথাও আবার ১৪৭০ টাকার সার ২১০০ /২২০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।কিন্তু চাষীদের সঠিক রসিদ দেওয়া হচ্ছে না।আবার আলু বীজ নিয়েও চলছে চূড়ান্ত অনিয়ম।আলু বীজ কিনতেই চাষের খরচের অর্ধেক টাকা চলে যাচ্ছে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রতি বছরই আলু বসানোর মুখে কেন সারের জোগানে ঘাটতি দেখা যায় ? ১৪৭০ টাকার সার কোথাও ১৮০০, কোথাও ২১০০/২২০০ কেন ? আলু বীজের আজ একদাম, তো কাল আর এক দাম। চাষ করতে নাভিশ্বাস উঠছে চাষীদের। কোথায় টাস্ক ফোর্স ? কোথায় কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা ? আলুর দাম বাড়লে যারা মাঠে নেমে পড়েন এখন তারা কোথায় ? তারা কি শীত ঘুমে আচ্ছন্ন ? চাষীদের জন্য শুধুই কি মায়া কান্না ! কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার,চাষের বাজারের ওপর কারোর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই কেন ? মুখেই কি শুধু চাষী প্রেম ? বড় বড় ব্যবসায়ীদের হাতে যদি বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তাহলে সেটা তো উৎপাদক ও উপভোক্তা,দু’জনের জন্যই ক্ষতিকর।রাজনৈতিক কারণে সারের জোগানে টান,না কি বাজারে সারের ঘাটতি, সর্বাগ্রে তা ভেবে দেখা দরকার। কেবলমাত্র মুখে চাষীদের জন্য দরদ দেখালে চলবে না।চাষীদের স্বার্থে অবিলম্বে বাজারে হস্তক্ষেপ করতে হবে সরকারকে।দু’একবার কেবলমাত্র লোক দেখানো টহলদারি নয়,অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে চালাতে হবে জোরদার অভিযান। সর্বাগ্রে মনে মনে রাখতে হবে,চাষ বাঁচলে, চাষী বাঁচলে,আমরাও বাঁচব।যারা আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিনরাত এক করে দিয়ে ফসল ফলাচ্ছেন, তাদের বাঁচাতে অবিলম্বে মাঠে নামতে হবে সরকারকে। নির্ধারিত মূল্যে চাষীরা যেন সার পায়,সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।চাষের বাজারের রাশ থাকুক সরকারের হাতে,ব্যবসায়ীর হাতে নয়।প্রতি বছর সারে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।আর সেই সার নিয়ে কালোবাজারি হলে ভর্তুকির উদ্দেশ্যই তো বৃথা হয়ে যায়।যাদের জন্য ভর্তুকি তারাই যদি বঞ্চিত হয় তাহলে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর পেট ভরাবার জন্য ভর্তুকি দিয়ে লাভ কি ?