খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

এক ছোবলেই ছবি !!

পার্থ পাল -- চম্পা সব নিয়ম ঠিকঠাকই মেনেছিল। ও জানতো বিষধর সাপে কামড়ালে ছয় ঘন্টার মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তাই ওর বরকে সেদিন পদ্মগোখরোয় কাটার পর প্রতিবেশীরা ওকে ওঝাবাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দিলেও ও হাসপাতালই যায়। চিকিৎসকরাও দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন। চম্পার স্বামী তপনকে এন্টিভেনোম দেওয়া হয়। তবুও...
   কেন বাঁচলো না তপন? জানতে হলে সাপ সম্পর্কে জানা জরুরি। সাপ সরীসৃপ অর্থাৎ বুকে হেঁটে চলে। এরা শীতল রক্তের প্রাণী। তাই সারাটা শীতকাল এরা আপাত গরম জায়গায় ঘুমিয়ে থাকে। যাকে বলে 'শীতঘুমে'-এ থাকা। শীত সহ্য করতে পারে না বলে শীত প্রধান মহাদেশ যেমন আন্টার্টিকা এবং দেশ যেমন আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, গ্রীনল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডে সাপ নেই। সাপেদের যত বাড়বাড়ন্ত এই নিরক্ষীয় এলাকায়। সারা পৃথিবীতে মোট তিন হাজার প্রজাতির সাপ আছে। যাদের মধ্যে ছ'শ প্রজাতির সাপ বিষধর। যাদের মধ্যে আবার মাত্র দু'শ প্রজাতির সাপের বিষে মানুষের ক্ষতি হতে পারে।
   আমাদের দেশে তিনশ প্রজাতির সাপের মধ্যে বাষট্টি প্রজাতির সাপ বিষধর। তাদের মধ্যে চারটি সাপ ভয়ংকর। যাদের একসাথে ডাকা হয় বিগ ফোর নামে। এরা হলো চন্দ্রবোড়া, বোড়া, কালাচ আর কেউটে। বসন্তকাল শেষ হয়ে গ্রীষ্ম শুরু হলেই আশেপাশে দেখা মেলে এদের। দীর্ঘ শীতের উপবাস শেষে এরা এই সময় ভীষণ রকম ক্ষুধার্ত থাকে।এদের খাবার মূলত ইদুর, ব্যাঙ,পোকা, পাখি ও পাখির ডিম। খাদ্য গরম না হলে এদের মুখে তা রোচে না। তাই শিকার করে জ্যান্ত অবস্থাতেই শিকারকে খেয়ে ফেলে এরা! সাপেরা মূলত মানুষকে এড়িয়ে চলে। কিন্তু এদের সামনে অজান্তে মানুষ চলে এলে, তখন আত্মরক্ষা করতেই এরা ছোবল বসায়। বিষধর সাপের বিষ দাঁত থাকে দুটি। তাই সাপে কাটা রোগীর আঘাত পাওয়া জায়গায় দুটি দাঁতের চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে সাপটি বিষধর। অন্যদিকে চিতি, ঢেমন, দাঁড়াশ, হেলে এবং ঢোঁড়ার মত বিষহীন সাপে কামড়ালে দাঁতের সারির চিহ্ন দেখা যায়।
      বিষধর সাপের কামড়েও সব সময় মৃত্যু হয় না। তার কারণ সাপের বিষের পরিমাণ এবং মাত্রার সময়ভিত্তিক হ্রাসবৃদ্ধি হয়। তবে আঘাত পাওয়া স্থানে দুটি দাঁতের চিহ্ন দেখলে হাসপাতালই একমাত্র গন্তব্য হওয়া উচিত। কেবল জেনে যেতে হবে সাপটি কোন প্রজাতির - কেউটে না কালাচ? হাসপাতালে এন্টিভেনোম মজুত থাকে।  সঠিক অ্যান্টিভেনোম প্রয়োগ করলেই রোগী বেঁচে যায়।
       তবে তপন বাঁচলো না কেন! বিরাট দেশ ভারতবর্ষে এক প্রজাতির সাপেরও চরিত্র ভিন্ন রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। পশ্চিমবঙ্গের পদ্মগোখরোর বিষ নিউরোটক্সিক অর্থাৎ তা নার্ভ বা স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্যদিকে অরুণাচলপ্রদেশের পদ্মগোখরোর বিষ ক্ষতি করে দেহের কোষ-কলাকে ( সাইটোটক্সিন )। তাই ওই রাজ্যের সাপের অ‍্যান্টিভেনোম কাজ করেনি এ রাজ্যে। তাই তপন বেঁচে ফেরেনি।
        এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে এই দেশে। তা রুখতে আছে উন্নত প্রযুক্তি। সাপের বিষ লঘু করে প্রথমে ঘোড়াকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তখন ঘোড়ার রক্তে অ‍্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই অ্যান্টিবডি থেকে বিজ্ঞানীরা অ‍্যান্টিভেনোম তৈরি করেন।  মুম্বাইয়ের হ‍্যাফকিন ইনস্টিটিউট অ‍্যান্টিভেনোম তৈরি করার সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন প্রদেশ-ভিত্তিক সাপের থেকেই বিষহর তৈরি করতে। তখন আর এমন দুর্ঘটনা ঘটবে না। 

        কেউই আর এক ছোবলে ছবি হবে না।

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest

Recent Posts

author-avatar
  • March 16, 2025

মেমারি সহ গ্রামীণ এলাকায় জল সরবরাহ এগিয়ে চলেছে

author-avatar
  • March 5, 2025

এ কেমন উল্লাস !

author-avatar
  • March 5, 2025

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই জামালপুর ব্লকে গরহাজির ৩৯ জন পরীক্ষার্থী,যার মধ্যে ছাত্রী ৩০ জন এবং ছাত্র ৯ জন।গরহাজিরার খাতায় কন্যাশ্রীর সংখ্যা বেশি কেন, উঠছে প্রশ্ন।

author-avatar
  • March 5, 2025

ধনেখালি কিষান মান্ডি থেকে ছাত্র ছাত্রীদের পায়ে হেঁটে ঠেলে ঠেলে আনতে হচ্ছে সবুজ সাথীর সাইকেল !

author-avatar
  • March 5, 2025

বাংলা আবাস যোজনার এক জনের টাকা অন্য জনের অ্যাকাউন্টে ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ।ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের চকদীঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের রঙ্কিনীমহুলা এলাকার ঘটনা।