তন্ময় কবিরাজ
গণতন্ত্রে এখন রোমান সম্রাট নিরোদের মত মানুষদের দাপট।কেউ তো আবার বলছেন দোসর ইডিপাসও রয়েছে,যারা নিজেদের দোষ দেখতে পায়না ।নির্বাচনী বন্ড বাতিল নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ খুব উচ্ছসিত, কারন এতে নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্নীতি এবার সব ফাঁস হয়ে যাবে । অনেকের কাছে আবার এটা গনতন্ত্রের জয়।কারন কেন্দ্র থেকে বেশকিছু দিন আগেই প্রস্তাব এসেছিল,রাজনৈতিক দলের তহবিল নিয়ে জনসাধারনের জানার অধিকার নেই। নির্বাচনী বন্ড বাতিলে সেই প্রস্তাব বাতিল হলো। মানুষের অধিকার যখনই ক্ষুণ্ণ হয়েছে বিচারবিভাগ হস্তক্ষেপ করেছে, গনতন্ত্রে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সংবিধানের আদর্শকে রক্ষা করেছে।বিচার বিভাগ তাঁদের কর্তব্য পালন করছে আর পালন করছে বলেই বারবার শাসকের রোষানলে পড়ছে । শাসক বিচারব্যবস্থাকে দখল করতে চাইছে যা ইসরাইলে হয়েছে।কিন্তু প্রশ্ন হলো, যাদের জন্য এতো আয়োজন তাঁরা স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়ে যাবার পরেও নিজের অধিকার কর্তব্য সম্পকে সচেতন হয়েছে? প্রশ্নটা এই কারণে করলাম কারন বিগত কয়েক বছরে ভারতের গণতন্ত্রের ছবিটা দেখলে বোঝা যাবে,যে রাজনৈতিক দলের দুর্নীতি বেশি খবরে এসেছে সেই দলই আবার ক্ষমতায় এসেছে। এবার ক্যাগের রিপোর্ট থেকে নির্বাচনী বন্ড – সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির দিকে,তারপরেও বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, বিজেপিই এবার লোকসভা ভোটে জয় লাভ করবে। অন্যদিকে, রাজ্যের ক্ষেত্রেও এক ছবি। সন্দেশখালি থেকে গার্ডেনরিচ কান্ড তার পরেও তৃণমূল সরকার রাজ্যে ভোটে এগিয়ে। প্রতিবেশ দেশ চীন যখন সীমান্ত উত্তেজনা থেকে শুরু করে বাজার দখল করছে,তখন ভারত সরকার চীনের দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, অ্যাপস বন্ধ করলে দেশের মানুষ অস্থির হয়ে যায়, চোরাপথে তা সংগ্রহ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়।আবার মুখে চীনকে গালিগালাজ করবে। মানুষের এই দ্বিচারিতা করার জন্যই রাজনীতিবিদরা তার সুযোগ গ্রহণ করছে। বর্তমানে রাজনীতি একটা মানসিক অসুখ। বাড়ি ভাঙা পড়লে উদ্ধারকাজ পরে শুরু হবে, আগে হবে রাজনীতি। আগের সরকার না পরের সরকার,নেতা না প্রোমোটার, ইঞ্জিনিয়ার না কাউন্সিলর – দায় কে নেবে?শুধু দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা।কতো মানুষ মারা গেলো , পরিবার ভেঙে পড়লো সেসব চিন্তা নেই,বরং একটা ক্ষতিপূরণ দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেবার চেষ্টা যেমন সন্দেশখালিতে চলছে। অনেকে ব্যঙ্গ করে বলছে, যত বাড়ি ব্রিজ ভাঙবে ততো শাসকের লাভ কারন ২০১৬সালে ব্রিজ ভাঙার পরেও শাসক ভালো ভোট পেয়েছিল।তাই মৃত্যু আর মানুষকে নাড়া দেয় না? মানুষ শুধু সব জায়গাতেই রাজনীতিকেই দেখতে পায়,ওই রবি ঠাকুরের ক্ষুধিত পাষাণ গল্পের মতো ভূতের ছায়া।আসলে রাজনীতি এখন এতই সস্তা যে সবাই রাজনীতি বুঝতে পারে।রাজনীতিতে পড়াশোনার বালাই নেই। তাই ফেল করা ,জেল খাটা আসামি থেকে শুরু করে কবি ,সাহিত্যিক,বিচারপতি , হিরো হিরোইন সবাই এখন রাজনীতিতে।কি অপূর্ব সাম্য!শুধু মানুষের দুর্ভাগ্য,এতো মানুষ মানুষের সেবা করবে বলে রাজনীতিতে আসছে অথচ মানুষের ভালো হচ্ছে না,যা ছিল তাই রয়েছে কিংবা আরোও খারাপ হচ্ছে। বরং যারা ভালো করতে এলো তারাই ফুলে ফেঁপে ঢোল হয়ে উঠল।মানুষ এসব ঠকবাজির বাইরে কবে বেড়িয়ে আসতে পারবে? যারা আসছে তাদের ক্ষমতার লোভ।কেউ তো বলছে শুকুন যদি রাজনীতি বুঝতো তাহলে হয়তো সেও আসতো?ভালো কাজ করতে হলে রাজনীতিতে আসার দরকার নেই। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষরা জানে, রাজনীতির জল আজ ঘোলা।কে কোথায় ডুবে কোথায় উঠবে কেউ জানে না? মানুষের সঙ্গে প্রতারনা করাই রাজনীতির মূল মন্ত্র। এখন তো মুখোশ পরে রাজনীতি হয়।তাই বিচারের আসনে থেকেও রাজনীতি করেছে অনেকে। শিক্ষক নিজে রাজনীতি করছে, ছাত্রদের উৎসাহিত করছেন।কই উত্তাল রাজনৈতিক পরিবেশেও রবীন্দ্রনাথ তো শান্তিনিকেতনে রাজনীতিকে ঢুকতে দেননি।এতো মানুষের সেবা করেছেন মাদার টেরেসা কিন্তু রাজনীতি করেননি। রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দর বুলি আওড়ায় নেতা মন্ত্রীরা তবু পরধর্মকে সন্মান করতে পারে না। ডিরোজির মুক্ত চিন্তা কোথায়? বিরোধী কথা বললে শাসক মেরে সিঙ্গুর নন্দিগ্রাম বানিয়ে দেবে। মানুষ দেখছে,চারদিকে শোষণ।তবু অবস্থার পরিবর্তন নেই।আসলে চারপাশে অবস্থার সঙ্গে মানুষও পাল্টে ফেলেছে নিজেকে।সে নীরব।তার কিছুই করার নেই।সেই সুযোগেই শাসক অবাধে গনতন্ত্র লুট করে নিচ্ছে। পুকুরের জলে ভাসছে ব্যালট, ছাপ্পা, রীগিং।আর কিছু না পেলে জিনিসের দাম বাড়িয়ে, মদের বিক্রী বাড়িয়ে সেই টাকায় গরিব মানুষকে কিছু আর্থিক ভর্তুকি দিয়ে ভোট কেনার চক্রান্ত চলছে। মানুষের পালাবার জায়গা নেই, যেমন নির্বাচন কমিশন বা বিচারবিভাগের কিছু করার নেই কারন তাদের শাসকের পুলিশ নিয়েই কাজ করতে হয়।তাই যা হবার তাই হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ নেপাল গণতন্ত্রের দুর্নীতিতে দেখে গণতন্ত্রের উপর আস্থা হারিয়েছে। তারা পুনরায় রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবীতে রাস্তায় নেমেছে।মরতেই যদি হয় তাহলে একজনের হাতেই মরবো! পরোক্ষ গণতন্ত্রে কাটমানির চাপে আসলের থেকে সুদ বেশি! ভারতে গনতন্ত্র এখনও টিকে আছে কারন বিকল্প নেই। ভোট শতাংশ সব দলেরই ৫০ এর নিচে।আজ যে ডান কাল সে বাম।শুধু আদর্শ বিক্রির ডিগবাজি। কেমো চলছে ক্যান্সারের,প্রহসন। নন্দন সেজে উঠে, আইপিএলে চেয়ার লিডার মাতিয়ে রাখে,কিন্তু রাজপথে চাকরির জন্য আন্দোলন করা বেকার ছেলেগুলো একা। একদিকে শিল্প নেই, অন্যদিকে, কর্পোরেটে ছাঁটাই হওয়া বেকারদের কোন রকমে কম বেতনে নিয়োগ করা হচ্ছে। মানুষ ক্রিতদাস পরিনত হচ্ছে। মানুষও আজ পলাতক।কেউ ঘরবন্দী,কেউ বিদেশমুখি,আর যারা একটাও পারলো না তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইলো যা পাচ্ছে তাই নিয়েই সুখে থাকার চেষ্টা করছে।কিন্তু সুখে থাকলে তো ভোট হবে না তাই শাসক প্রজার সুখ নষ্ট করতে বৈষম্যের জন্ম দিচ্ছে সেটা লিঙ্গ বৈষম্য , ডিএ থেকে শুরু করে জাতপাত, ধর্ম বা হালফিলের ওরা আমার নীতি। কিছু একটা দরকার যাতে মানুষের সামাজিক জীবন শান্তির না হয়।মানুষ একসঙ্গে থাকলে তো ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেতে পারে তাই বিভেদ জারি থাক,পারলে পরিবার ,গ্রাম – সব দখল করে নাও। পরিবারগুলো ক্রমশ ভাঙছে ক্যাপসুলে। পরিযায়ী জীবনে শুধুই আতঙ্ক। বনে গেয়েও সুখ নেই।কারন দার্জিলিং বা লাদাখে বিপন্ন পরিবেশ তারাও যশিমঠের সিক্যুয়েল হবার সম্ভাবনা বহন করছে। ইতিমধ্যে জঞ্জাল পরিষ্কার করার জন্য আদালত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন। ভোটের কটা দিন সুখের স্বপ্ন আর বাকি দিনগুলো ভুলের মাসুল গুনতে হয় নাগরিকদের।এটাই তো জীবনের অভ্যাস!এতো বৈষম্যের মধ্যেও মানুষ পরিবেশে শান্তি বজায় রেখেছে।কেউ ভোট দেয়,কেউ দেয় না,কেউ নটাতে দিল কারন সে জানে যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ,আর যারা ভোট দিল তাদের কাছে বিকল্প নেই।তাই ভোটার কার্ড ঝেড়ে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো মানেই ভয় সে নির্বাচন কমিশন যতোই সাইরি শুনিয়ে আশ্বস্থ করার চেষ্টা করুক না কেন। ভোটে এতো মানুষের প্রান চলে যায় সেখানে ফোর এম থিওরি কাজ করবে কিনা সন্দেশ আছে অনেকেরই।তাই নাগরিক বলছে,তোরা বাবা রাজা হো,পারলে মহারাজ হো, আমাকে আমার মতো থাকতে দে,আমার সংসার আছে।এক টোটো চালককে তার বউ বলছে ,” এবার একটা বাচ্ছা নেবো।”টোটো চালক উত্তর দিলো,”বাচ্ছাটাকি আমার মত টোটো চালাবে?”গনতন্ত্রে উৎসব তাই মৃতুর ফাঁদ। অ্যাডিশনের” মিশ্চিফ অফ্ পার্টি স্পিরিট “প্রবন্ধটা আজ তাই খুব প্রাসঙ্গিক বলেই মনে হয়।