খবর সোজাসুজি নিউজ ডেস্ক – জামাই ফেরি ! গ্রামাঞ্চল বা শহরে বিভিন্ন সামগ্রী ফেরি করা হয়।কেউ মাথায় করে,কেউ আবার ভ্যানে করে, আবার কেউ টোটো করে ফেরি করে। কিন্তু তাই বলে জামাই ফেরি,তাও আবার ভ্যানে চাপিয়ে ! নিশ্চয় অবাক লাগছে ! অবাক হওয়ারই কথা।তবে ঘটনা সত্যি।
রীতিমতো মাইকিং করে ভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে জামাই ফেরি করা হচ্ছে।বিভিন্ন জামাইয়ের বিভিন্ন দাম। যার যেমন সামর্থ্য সে তেমন জামাই নিতে পারে। পাজামা পাঞ্জাবি পরে মাথায় টোপর মাথায় দিয়ে বাবাজীবনরা বসে আছে ভ্যানে। আর ফেরিওয়ালা খদ্দেরকে মাইকিং করে ডাকছে। আর গ্রামের বাসিন্দারাও দরদাম করে জামাই কিনছেন।
পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের বোসপাড়া সংলগ্ন এলাকায় বুড়ো শিবের গাজনকে ঘিরে প্রতিবছরই এইসব রঙ্গ তামাসা হয়।তিন দিনের গাজনকে ঘিরে গোটা গ্রামে চরম উন্মাদনাও থাকে।গাজনের অন্যতম পুরোহিত রাজেশ ভট্টাচার্য জানান,খণ্ডঘোষের রায়পাড়া,ভট্টাচার্য পাড়া ও বোসপাড়া মোট তিনটি পাড়া মিলিয়ে বুড়ো শিবের গাজন হয়।পুরোহিত উমাপদ ভট্টাচার্য জানান,
দীর্ঘদিনের পুরানো রীতি মেনেই গাজন হয়ে আসছে।গাজনে এলাকার ১০০ থেকে ১৫০ জন সন্ন্যাস গ্রহণের পর বুড়ো শিবের পূজোপাটে অংশ নেয়। আর বুড়ো শিবের গাজনকে ঘিরে সন্ন্যাসরা বিভিন্ন সং সাজার মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্র ও কাহিনী তুলে ধরেন।সেখানে যেমন থাকে বর্তমান বিষয় তেমনি প্রাধান্য পায় পৌরাণিক কাহিনী ।
এবার বুড়ো শিবের গাজনে জামাই ফেরি নিয়ে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। জামাই ফেরি বলে কথা।একেবারে হাতে গরম বর। কেউ কেউ একটু ঠাট্টা করে বলেন, দুয়ারে বর।তা যে যাই বলুন, তাতে কি আসে যায়।
ফেরি করা হয় ৫০০ থেকে ৫০০০ মূল্যের জামাই বা বর । তবে ৫০০ টাকার জামাইয়ে কোনো গ্যারান্টি নেই বলে জানান হয় ফেরিওয়ালাদের পক্ষ থেকে।আর গ্রামবাসীরাও বেশ মজা করে দরদাম করছে সেটাও দেখা গেল।এ এক অভিনব ঘটনা। এমন ফেরি কিন্তু আগে আর কোথাও কখনো দেখা যায় নি।শোভাযাত্রা করে ফেরিওয়ালা গ্রাম ঘুরে শিব মন্দিরে পৌঁছায়।পুরোহিত উমাপদ ভট্টাচার্য বলেন, দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষজন বুড়ো শিবের গাজনে ভিড় করেন।দীর্ঘদিনের পুরানো এই রীতি মেনেই বুড়ো শিবের গাজন হয়ে আসছে।তিনি আরও বলেন,প্রায় চারশো বছরের পুরনো বুড়ো শিবের গাজন।নির্বাচনের জন্য এবার গাজনে তারিখ একটু পিছিয়ে দিতে হয়েছে।
খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম বলেন, এই বুড়ো শিবের গাজন মানে গোটা এলাকার মানুষজন আসবে, উৎসবে মাতবে এটাই দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে।তবে বর ফেরি নিয়ে তিনি বলেন, মানুষ উৎসবে আনন্দ পায়,মজাও লাগে।বর ফেরি অন্যতম আকর্ষণ। তাই সবাই তাড়িয়ে তাড়িয়ে গাজন উপভোগ করেন।