খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

জয় পরাজয়

রঞ্জন কুমার ব্যানার্জী

গোটা বাড়ি জুড়ে আজ হইচই। সুমনাকে নিয়ে বাড়ির বড়রাও বেশ দুশ্চিন্তায়। যে মেয়েটা এতদিন সবাইকে মাতিয়ে রাখত, ছিল সব পিকনিকের মধ্যমণি, সে কিনা এরকম মুখ গোমড়া করে বসে থাকবে। গাড়ি ভাড়া করা হয়ে গেছে, রাঁধুনি, ডেকরেটার্সের মাল বুক করা হয়ে গেছে, আর এসমেয়ই এত সমস্যা! বাড়ির সবচেয়ে বড় মেয়ে সুমনা। সবকিছুর মূলে ঐ রজতটা। তুই আসবিনা, আসবিনা। সেটা আগের দিন ঢাক পিটিয়ে বলার দরকার কী ছিল? মেজকাকা, বড়পিসাই সবাই এসে গেছে, মাঝে তো আর একটা দিন। তিনতলা বাড়িটা এখন তিল ধারনের জায়গা নেই। বাড়ির সবার কথাতেই অস্বস্তি লাগছে সুমনার। কাল থেকে একটাও ফোন ধরেনি রজতের। চৌঠা মাঘ, ফোরথ্ ফেব্রুয়ারী মানে আর মাত্র একমাস এগার দিন পর ওদের বিয়ে। এসময় ওদের বাড়ি থেকেই পিকনিকের আমন্ত্রণটা গিয়েছিল পেশায় ডাক্তার রজতের কাছে। একটু ইতস্তত করে সায়ও দিয়েছিল ছেলেটা। তাতেই উন্মাদনাটা তিনগুণ বেড়ে গিয়েছিল সুমনার। রবিবারই ছুটেছিল পার্লারে। ঠিক করেছিল কোনো লেহেঙ্গা, চুড়িদার বা প্লাজো নয়, গোলাপী শাড়িতেই দাঁড়াবে রজতের সামনে। টনক নড়িয়ে ছাড়বে ডাক্তারবাবুর। সব ঠিকঠাকই ছিল, বাধ সাধল কালকের ফোনটা। কোন্ হাউসস্টাফ ছুটি নিয়েছে, অগত্যা ডিউটি এসে পড়েছে ওর ওপর। হতাশ গলায় ফোন করেছে হবু শ্বশুরবাড়িতে। কথার মাঝেই ফোন কেটে দিয়েছে সুমনা। স্যুইচ অফ্ করে দিয়েছে মোবাইল।হতে পারে সে ডাক্তার, সুমনাও অপরূপা, লাবণ্যময়ী। তাছাড়া ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ক্লাস এম এস সি । চন্দনপুরে দূর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশেই ফাঁকা মাঠ। শীতের সকালে ঝলমলে রোদের মতই মেজাজটাও সবার ফুরফুরে। রাঁধুনি আর তার সহযোগী ত্রিপল টাঙিয়ে তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রাতরাশ সারা হয়ে গিয়েছে—কাশ্মীরী আলুর দম, মটরশুটির কচুরির সাথে গুড়ের রসগোল্লা। বাচ্চারা ক্রিকেট খেলছে, মহিলারা রোদে পিঠ দিয়ে জুড়ে দিয়েছেন বিয়েবাড়ির গল্প। কয়েকজন আবার আশ্রমের দিক থেকে ঘুরে এসেছেন। সত্যিই এই দিনটার জন্য সারাবছর অপেক্ষা করা। তবে সবাই তাকিয়ে আছে কখন অন্তাক্ষরী খেলাটা শুরু হবে। এটা ব্যানার্জ্জীবাড়ির পিকনিকের মূল আকর্ষণ। পুরুষ বনাম মহিলা। শর্ত একটাই –একজন গায়ক ছাড়া অন্য গায়কের গান গাওয়া যাবে না। লাঞ্চের পরে এ যেন পান্ডব-কৌরবের যুদ্ধ। উত্তেজনায় ফুটছে দুপক্ষই। ব্যতিক্রম সুমনা। কাকীমাদের পিছনে চুপটি করে বসে আজ ও নিরব দর্শক। কারোর সহানুভূতিই আজ ভালো লাগছে না ওর। টসে জিতে ‘কে তুমি তন্দ্রাহরণী’ দিয়ে মান্না দে’র পক্ষ নিয়েছে ছোটকা। মেয়েদের গাইতে হচ্ছে কিশোরের গান। টক্করটা সমানে সমানেই চলছে। পাক্কা দু’ঘন্টা যেন বেঁচে থাকার লড়াই।কাকীমা আর রিমির যেন স্টক শেষ হতেই চায় না।এখানে হারা মানে টিপ্পনি কাটবে সবাই। হাবেভাবে বোঝা যাচ্ছে ছেলেদের গ্রুপই এবার রণে ভঙ্গ দেবে। এবার ওদের ‘আ’ দিয়ে গান গাইতে হবে। ‘আ’ দিয়ে গান! ‘আমার ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে’, ‘আমি নিরালায় বসে’, ‘আমি তার ঠিকানা রাখিনি’, ‘আবার হবে তো দেখা’—সবই তো হয়ে গেছে! মাথা হেঁট করে ভাবছে ছোটকা, মেজমামারা। নাঃ, আর পারা যাচ্ছে না। আর ওদের দশা দেখে হেসেই খুন সুমনার মেজমা, মা আর ছোটপিসি। খেলার বিজেতা ঘোষনার জন্য ‘এক-দুই-তিন’ গুনতে যাচ্ছিল রিঙ্কি। ‘আমি যামিনী তুমি শশী হে’—হঠাৎ আওয়াজে সবাই চমকে তাকায়, ‘একি রজত তুমি!! কখন এলে?’ হাসিমুখে এগিয়ে যায় সুমনার মা।ফর্সা দুই গালে রক্তিম আভা যেন পড়ন্ত সূর্যের লাল ছটার মতই উজ্জল সুমনার মুখে।ও যে আজ জয়ী।

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest

Recent Posts

author-avatar
  • May 30, 2025

১৫ দিনের বাছাই করা খবর নিয়ে আজ প্রকাশিত হল খবর_সোজাসুজি পত্রিকার ৩০ মে সংখ্যা(KHABOR SOJASUJI (Vol-2,Issue -24, MAY 30 , 2025)

author-avatar
  • May 2, 2025

মাধ্যমিকে চতুর্থ পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্ৰামের নিরোল হাই স্কুলের ছাত্র মহম্মদ সেলিম, প্রাপ্ত নম্বর – ৬৯২

author-avatar
  • May 2, 2025

শিপতাই মহুলা সতীরঞ্জন বিদ্যামন্দিরে মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক কৌস্তুভ দাস,প্রাপ্ত নম্বর – ৬৪৩,দ্বিতীয় সুপ্রীতি ঘোষ,প্রাপ্ত নম্বর – ৬১৬,তৃতীয় ইরফান হাবিব, প্রাপ্ত নম্বর -৫৯৪

author-avatar
  • May 2, 2025

মাধ্যমিকে প্রথম উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের অদ্রিত সরকার,প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৬।শতাংশের বিচারে ৯৯.৪৩ শতাংশ।মেধা তালিকায় প্রথম দশে রয়েছে ৬৬ জন।

author-avatar
  • April 30, 2025

২ মে প্রকাশিত হবে মাধ্যমিকের ফলাফল।