খবর সোজাসুজি

চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!
Khabor Sojasuji Logo_200x120
চোখে চোখ রেখে কথা বলে !!!

লক্ষীর ভান্ডারেই বাজিমাত মমতার ! ব্যাকফুটে দুর্নীতি ইস্যু

ইসরাইল মল্লিক — জমে উঠেছে ভোট রাজনীতি। ময়দানে নেমে পড়েছে সব দল।এ বলে আমায় দেখ,ও বলে আমায়।এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের তুরুপের তাস মমতা ব্যানার্জির মস্তিষ্ক প্রসূত রাজ্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রকল্প লক্ষ্মীর ভান্ডার। লোকসভা ভোটের আগেই বরাদ্দ বেড়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে।এপ্রিলের শুরুতেই অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে টাকা।সাধারণ মহিলাদের ক্ষেত্রে বরাদ্দ ৫০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০০ টাকা আর তপশিলি জাতি,উপজাতি মহিলাদের ক্ষেত্রে ১০০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২০০ টাকা।স্বভাবতই খুশি মহিলা মহল।গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই মহিলা মহলে জয়জয়কার মমতার।লোকসভা ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের এই বরাদ্দ বৃদ্ধি তৃণমূলকে কিছুটা হলেও অ্যাডভান্টেজ দেবে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।এবারের নির্বাচনে লক্ষ্মীর ভান্ডারেই বাজিমাত করতে চাইছে তৃণমূল।ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে।ফলে মহিলারা আরও বেশি তৃণমূলের দিকে ঝুঁকেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে এই টাকা শুধু মহিলাদের হাত খরচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না।সংসার চালানোর ক্ষেত্রেও তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।দেখা যাচ্ছে কোনও কোনও পরিবারে মা,মেয়ে ও বৌমা মিলিয়ে তিন থেকে চারজন এই টাকা পাচ্ছেন।সেই টাকায় সংসার খরচের অনেকটাই সামাল দিচ্ছেন তারা।যে কারণে তৃণমূল ভোটে হেরে গেলে এই টাকা বন্ধ হয়ে যাবে বলে শাসক দলের পক্ষ থেকে যে প্রচার করা হচ্ছে তা অনেককেই প্রভাবিত করছে।তৃণমূলের হারে এই টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় থেকেই মহিলারা তৃণমূলকে ভোট দেবে বলে মনে করছেন অনেকে।সেই সম্ভাবনার কথা মানছে বিরোধী দলগুলিও।যদিও এর পাল্টা বিজেপির তরফে মাসে ৩০০০ টাকা, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বছরে পরিবার পিছু ১ লক্ষ টাকা কিংবা বামেদের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থানের কথা বলা হলেও তা বিশেষ কাজে আসছে না।তৃণমূলের লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প তাই বিরোধীদের কাছে যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।কারণ সাধারণ দরিদ্র মানুষের জীবনে দুর্নীতির কোনও প্রভাব সরাসরি না পড়লেও লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা তাদের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে।ফলে লক্ষীর ভান্ডার যে এবারের লোকসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে আবার ভোটের অনেক আগে থেকেই ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রের টাকা না দেওয়া নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল।আবার বিজেপিও এই প্রকল্পে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে।পাশাপাশি তৃণমূলের দুর্নীতি আর কেন্দ্রের টাকা না দেওয়ার বিষয়টি সামনে এনে দরিদ্র মানুষকে বঞ্চনা করার অভিযোগ তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বাম এবং কংগ্রেস।একদিকে বিজেপি ও অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস এই ত্রিফলা আক্রমণে অনেকটাই যেন বেসামাল তৃণমূল।দীর্ঘ প্রায় দু’বছর ধরে মজুরির টাকা না পেয়ে জব কার্ড থাকা শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।ভোটের আগে সেই শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বছরে ন্যূনতম ৫০ দিনের কাজ নিয়ে মমতা ব্যানার্জির প্রতিশ্রুতি পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে দিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি দীর্ঘ প্রায় দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার আটকে রাখলেও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে মিটিয়ে দিয়েছে প্রায় ৫৪ লক্ষ শ্রমিকের বকেয়া মজুরি,যা এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।অনেকে মনে করছেন এর ফলে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের বকেয়া টাকা ও কাজ না পাওয়ার জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অসন্তোষ সামাল দেওয়া যাবে।যদিও বিরোধীরা সে কথা মানতে নারাজ।তাদের দাবি, একেবারে বুথ স্তরে সাধারণ মানুষ নিজেদের চোখের সামনে লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতি হতে দেখেছেন।তাদের বঞ্চিত করে তৃণমূলের নেতা,জনপ্রতিনিধিদের রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখেছেন। ফলে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা বকেয়া টাকা পরিশোধ করে মেরামত করা সম্ভব নয়। বরং জীবন-জীবিকার প্রশ্নে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই মানুষ ভোট দেবে বলে বিরোধী দলগুলির দাবি।আবার আবাস যোজনার ঘর নিয়েও মানুষের মধ্যে দানা বাঁধছে ক্ষোভ।যাদের ঘর পাওয়ার কথা তাদের নাম আবাস যোজনার তালিকায় নেই,অভিযোগ।উল্টে সেই তালিকায় তৃণমূলের ধনী নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নাম থাকা নিয়ে প্রথম থেকেই সরব বিজেপি এবং বামেরা।ঘরের টাকা পেতে হলে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান,সদস্য ও নেতাদেরকে মোটা টাকা দেওয়ার ঘটনাও সামনে এসেছে।কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল এসে সেই সমস্ত দুর্নীতি ও অনিয়ম হাতেনাতে ধরেছে।যা নিয়ে জনসাধরণের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।যাকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বড় অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে মরিয়া বিরোধীরা।সেই মত প্রচারও করা হচ্ছে।যদিও এই ক্ষোভে জল ঢালতে তৎপর তৃণমূল।কেন্দ্র টাকা না দিলেও ভোটের পর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঘর করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।তবে মানুষের ক্ষোভকে তা কতটা প্রশমিত করবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।আর এই সবেরই উত্তর মিলবে ৪ জুন।

Share this on social media

Facebook
Twitter
Email
WhatsApp
Telegram
Pinterest

Recent Posts